বিমূর্ত শিল্পকলা ও ড. শেখ মনির: দর্শকের স্বাধীনতা যেখানে অবারিত

প্রতিনিধি | সমালোচনা

বৃহস্পতিবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮|১৮:২৭:৫৪ মি.



রবিউল খাঁ


ড. শেখ মনির আঁকছেন। সম্প্রতি তিনি গতিশীল বিমূর্ত চিত্রকলা আঁকতে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। এ চর্চা তাঁর পুরানো। মাঝে একটু থিতু হয়েছিলেন। সম্প্রতি আবার শুরু করেছেন। ভেতরের বিমূর্ত ভাবনাগুলো নতুন নতুন বিন্যাসে তুলে আনছেন। শিল্প ও শিল্পীকে একসাথে দর্শনের স্বাদই আলাদা। প্রায় চার বছর যাবত শিল্পী ড. শেখ মনিরকে দেখছি। জীবনের অনুভবগুলোকে বিমূর্ত চিত্রকলায় প্রকাশ করছেন। তাঁর শিল্পকর্ম দর্শককে সুখানুভূতি দেয়। চিন্তিত করে। তিনি বিমূর্ত চিত্রকলার বেশ উঁচু ফর্ম আঁকেন।

অনেক সময় তিনি অতিক্ষুদ্র উপকরণ ব্যবহার করেন । ফেলে দেওয়া কাগজের ঠোঙ্গা বা অবশিষ্ট কালি দিয়ে কাজ করেন। ফেলে দেওয়া জিনিসের প্রতি তাঁর বিশেষ মমত্ববোধ আছে। তু্চ্ছ উপকরণের ওপর রঙ চড়িয়ে তিনি অসামান্য বিষয় সৃষ্টি করেন । জীবনানন্দ যেমন সাদামাটা বিষয়কে মেটাফর হিসেবে ব্যবহার করে অসামান্য সৃষ্টি করেছেন তেমনি ড. মনিরও ক্ষুদ্র বা অতিক্ষুদ্র উপকরণ কাজে লাগিয়ে বিমূর্ত বিন্যাস গড়েন।

তাঁর রঙের ব্যবহার বহুমাত্রিক। তিনি রঙের রাসায়নে বেশ পোক্ত । রঙের অনুরাগ, রঙ-রঙ সম্পর্ক, রঙের আচরণ তিনি শুদ্ধতম উপায়ে প্রকাশ করেন । তাঁর কর্মে রঙ জলরঙ ব্যবহারের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। রঙের জ্যামিতি প্রয়োগে তিনি সিদ্ধহস্ত। রঙের ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রুচিময় প্রকাশ এবং অর্থ প্রক্ষেপণে শিল্পপ্রকৌশলীও বটে।

বহুমাত্রিক রেখা অংকন তাঁর চিত্রকর্মের আরেক মৌলক দিক। রেখা কত নান্দনিকভাবে টানা যায় তিনি তাঁর স্বাক্ষর রাখেন পরতে পরতে।
তাঁর আকাঁ ভারসাম্যপূর্ণ। রঙ ও ফর্ম স্থাপনে তিনি ভারসাম্য নীতি অনুসরণ করেন। তাঁর চিত্রকর্মে সূর ও ছন্দ দুটিই থাকে।

দর্শক নিজের মত তাঁর চিত্রকর্মের টেক্সস বোঝার সুযোগ পান। তাঁর শিল্পকর্মের একক কোনো অর্থ নেই। নেই ভাষাময় প্রকাশ। কেবল বিন্যাসের বুনন। শিল্পের স্রষ্টা হিসেবে তিনি হয়ত তাঁর শিল্পকর্মে অর্থ আরোপ করেন কিন্তু তা থাকে অনুচ্চারিত। যে কেউ চাইলে অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর শিল্প দেখতে পারেন পারেন। স্বাদ নিতে পারেন। অর্থ উদ্ধার সবসময় প্রয়োজনীয় না। তিনি অর্থ ইনফোরস করেন না। এটি মৌলিক দিক। তিনি তাঁর বিমূর্ত শিল্পকলা উপভোগে দর্শকে বিস্তর স্বাধীনতা দেন।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration