ভূবনের ঘাট

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০|১৯:৪২:৫০ মি.


সম্পাদক

ভূবনের ঘাটে বসা। বসে আছে অশ্বত্থের মগডালে ভূবনচিল। চোখ তার ভূবনের জলে। কখন পোঁটা দেয় মাছ। কখন ভাসায় শরীর অলসপ্রহরে। তখনি সে ঝাঁপাবে জলে সুযোগের অপেক্ষায়। অপেক্ষা সদ্ব্যবহারের। ভূবনের এ খণ্ড চিত্র। চিত্র লড়াইয়ের, বাঁচার লড়াই। শিকার এবং শিকারীর বাঁচা মরা। কেউ বাঁচতে চায় পালিয়ে, কেউ চায় তাড়িয়ে। কেউ বাঁচে কেউ মরে। খাদ্য ও খাদকের লড়াইয়ের রঙ্গমঞ্চ এ পৃথিবী।

ঘাটে তরী ভিড়লেই ধরমড়িয়ে উঠে সব। নিমিষে নায়ের এমাথা ওমাথা বোঝাই। মাঝির বৈঠা শুধু জলে। বাকী সব নড়াচড়াহীন দম নেয়। কখন জানি উল্টায় তরীখানা। কখন যে টোকা খায় পাথরের বুকে। টোকা খেলেই নায়ের গড়নে ফাটল। ডুবন্ত নায়ে পরিমরি লড়াই। দক্ষ সাঁতারুই কেবল বাঁচে। বাকী তলিয়ে যায় ওপারে। তারাও বাঁচে ভূবনের ঘাটের পাড়ানী থেকে। মাঝি আর কেরায়া চায় না নিত্যদিন। জীবন আর আহার চায় না বীজের জিন।

প্রতিটি ভোরেই দুয়ার খোলে মানুষ। প্রত্যাশা পৃথিবী স্বাগত জানাবে তাকে। জানাবে জীবনের কথা, গাইবে জীবন বন্দনার গান। আঁকবে সবুজ নিলীমা আর পাহাড়ের ছবি। যেখান থেকে গড়াবে ঝরণার জল। সবুজে সবুজময় হবে ফসলি জমি। চরাচরের জীবেরা খুঁটে খাবে দিনের আহার। ভূবন ঘাটের ভূবনচিলও খাবে উদরপূর্তি। সব-ই দয়াময়ের কৃপা।

ভূবন জুড়ে সচল অর্থের কল! কোথাও চলে জোরে, কোথাও চলে গায়ের জোরে। কোথাও চলে না, শক্তি মেলে না বলে। সেখানেই উদ্বৃত্ত শস্যের মালিকরা জাহাজ ভর্তি বদান্যতা দেখায় ক্যামেরার চোখে। দান গ্রহণেও লড়াই। চাপা পড়ে মরে অভুক্তরা। তারা ভূবনের ঘাটে লড়ির অপেক্ষায় ছিল। কখন আসবে খাদ্য উপচে পড়া বাহন। আর তাতে ক্ষুধার্তরা করবে অবগাহন। খাবে ভরপেট। যাবে দিবানিদ্রা অকালের কালে। তাদেরও কেউ কেউ চলে গেল ত্রাণে, আনমনে।

চিল এখনও অপেক্ষায়। ভূবনের ভা-ার বুঝি ফুরিয়েছে। অলস মীনেরা লাগায় না রোদ জলের ভাসানে। ভয়—কখন জড়িয়ে যায় জালে। কখন জীবন যায় শিকারের হাতে। বড়ই সতর্ক যাপন। জীবন যে রাখতেই হবে সমাজের তরে। সমাজের কল্যাণেই যে জীবন। তা বোঝাতে ব্যস্ত সব তার্কিক। তন্ত্র যার যার—বুঝতে হবে সবার।

ভূবনে ভ্রমিয়া দেখা এক অসুখ। সবাই কাঁপছে জ্বরে, কখন জানি কারে ধরে। ধরলেই সব শেষ। বাকী রাখে না অনিমেষ। ভূবনের ব্যাপারীরা আজকাল আতঙ্ক ফেরি করে। তলে তলে ফেরি করে নিজের শুদ্ধ মালামাল। বেচে মুখের মুখোশ। এ এক আজব তন্ত্রের কল। যা ঘোরায় বিশ্বমোড়ল। ঘোরে ভূবনের চোখ ক্যামেরার গতিতে। তবুও মানুষ মানুষের জন্য একথা ভেবে হই ধন্য। ধন্য হবার সুযোগ আসবে কোনকালে। আসবেই কোনো সূর্য উঠা সকালে। অপেক্ষায় থাকে ভূবনচিল ভূবনের ঘাটে।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration