গোধূলির গান : সায়াহ্নের সোনালি ফসল

প্রতিনিধি | সমালোচনা

বুধবার ১৭ জুলাই ২০১৯|১৬:১৩:৪৭ মি.


কুমার দীপ

শহীদ কাদরী (১৯৪২-২০১৬) এত কম লিখেছেন যে তাঁর নতুন কবিতা কিংবা কবিতার বই পাওয়া, তাঁর পাঠকের জন্য অনিন্দ্য এক প্রাপ্তির ব্যাপার। ‘উত্তরাধিকার’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ আর ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই’—এই তিনটি কাব্যের পরে অধিকাংশ মানুষ যখন প্রায় ধরেই নিয়েছিলেন আর কোনো নতুন বই পাওয়া যাবে না প্রবাসী কবির কলম থেকে, তখন অনেক দিনের পরে দেখা মেঘমুক্ত আকাশের মতো হাজির হলেন ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’ নিয়ে। আবার সেই মিহি জ্যোৎস্নার মতো কোমল আর ভেতরে সেঁধিয়ে যাওয়া আবেদনমুখর কিছু টাটকা কবিতা একসঙ্গে পাওয়া গেল! তারপর আবার বিরতি।

তবু থেকে থেকে দু-একটা কবিতা এবং কবিতার অনুবাদ হাতে দেখা যাচ্ছিল কবিকে। এরই মধ্যে দীর্ঘ অসুস্থ ও প্রবাস জীবনের ইতি টানলেন কবি। দেশে ফিরলেন, তবে নিথর দেহ হয়ে। তাঁর প্রয়াণের ঠিক এক বছর পর, আগস্ট ২০১৭-তে প্রথমা প্রকাশনের সৌজন্যে আমাদের হাতে এলো ‘গোধূলির গান’, তাঁর শেষ কবিতাগ্রন্থ। (সেপ্টেম্বর ২০১৭-তে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে ‘একটি আংটির মতো তোমাকে পরেছি স্বদেশ’ নামে যে বইটি বের হয়েছে, এটি তাঁর স্বদেশভাবনাপ্রসূত কবিতার সংকলন, কোনো মৌলিক গ্রন্থ নয়।)

‘গোধূলির গান’ কাব্যে ৩৫টি কবিতা আছে, যার মধ্যে ভাষান্তর, তথা অনুবাদ কবিতা আছে ১৩টি। মৌলিক ২২টি কবিতায় তো বটেই, অনূদিত কবিতাগুলির ভেতরেও শহীদ কাদরীর কাব্যসুধার স্বতন্ত্র স্বাদ-গন্ধ পেতে বিলম্ব হয় না সচেতন পাঠকের। বইটির ‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা’ শিরোনামের ভূমিকাটিতে কবি সাজ্জাদ শরীফ লিখেছেন, ‘শহীদ কাদরী শারীরিকভাবে গত হলেও বাংলা কবিতার পাঠকের জন্য এ এক আনন্দের খবর যে মৃত্যুর পরও তাঁর আরেকটি কবিতার বই বেরোতে পারল।’ সত্যিই আনন্দের খবর এটা। এই বইয়ের কবিতাগুলো মূলত কবিপত্নী নীরা কাদরী কর্তৃক সংগৃহীত ও পাঠোদ্ধারকৃত। কিছু কবিতা তরুণ কবি পিয়াস মজিদের মাধ্যমেই প্রাপ্ত। বইটি সমসাময়িক অগ্রজ কবি শামসুর রাহমানকে উৎসর্গিত হয়েছে কবিপত্নীর ইচ্ছেতেই—এ কথা ভূমিকা থেকেই জানতে পারি আমরা।

গ্রন্থটির প্রথমেই রয়েছে নাম কবিতা ‘গোধূলির গান’, যেখানে জীবন সায়াহ্নে এসে কবি গভীরভাবে স্মৃতিকাতর, মৃত্যুভাবনায় আক্রান্তও বটে। কবি বলেন, ‘সন্ধ্যার নদীর স্বরে/ কে যেন মন্ত্রের মতো/ উচ্চারণ করে/ কবেকার ভুলে যাওয়া নাম।’ শেষে বলছেন, ‘এবং হঠাৎ/ একটি অচেনা পাখি/ দ্যুলোক-ভূলোকজুড়ে/ বারবার রটিয়ে দেয়/ আমার নতজানু পরিণতি,/ আমার অন্ধকার পরিণাম !’ ঠিক এইরকম না হলেও মৃত্যুভাবনা হানা দিয়েছে বইটির চতুর্থ কবিতা ‘অপেক্ষা করছি’তেও, প্রিয়তমা সঙ্গীর জন্য একাকী বাসায় অপেক্ষা করতে করতে। এ কবিতায় ধরা দিয়েছে কাদরীর স্বভাবসুলভ পঙক্তিবিন্যাস, খবু সহজ আটপৌরে শব্দচয়নে কথা বলতে বলতে নান্দনিক চিত্রকল্প তৈরির প্রবণতা :

টেলিফোন করছি এমনভাবে
যাতে বৃষ্টিধারার মতো নম্বরগুলো বেজে ওঠে,
যাতে তোমার মনে হয়
কে যেন গাইছে গীতবিতানের গানগুলো,

বৃদ্ধ বয়সে এসে একা থাকতে কবির ভয় লাগে। বিচ্ছেদ যতো ক্ষুদ্রই হোক, তাতে কবির মনে জেগে ওঠে ভিন্ন আশঙ্কা। ‘সব বিচ্ছেদের মধ্যেই রয়েছে মৃত্যুর স্বাদ।’ তাই কবির কাছে মনে হয়, ‘সংহারের কালীমূর্তির মতো রাত্রি নামে/ পৃথিবীব্যাপী।’ এই সংহাররূপের নমুনাই যেন তিনি দিয়েছেন একটু বাদেই—‘ইরাক জ্বলছে। আফগানিস্তানের পাহাড়ে-পাহাড়ে/ হন্তারকদের সাব-মেশিনগান/ গর্জন করছে বারবার। আত্মহত্যাকামী/ ব্রেনওয়াশ্ড বালকেরা ঊরুতে গ্রেনেড বেঁধে/ ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের শহরে।/ ঘন ঘন সাইরেন বাজিয়ে ছুটছে/ পুলিশের হলুদ গাড়ি।’ এসব শঙ্কা থেকে, মৃত্যুর আগে অন্তত ‘একটি শেষ চুম্বন’ চেয়েছেন কবি।

শুধু মৃত্যুভাবনাপ্রসূত এই কবিতাটিতেই নয়, সময়ের আত্মঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের কাব্যিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন এই কাব্যের অনেকগুলো কবিতায়। ‘এখন সেই সময়’ কবিতায় স্পষ্টতই বলেছেন, ‘যাকে অসময় বলতে পারো, দুঃসময় বলতে পারো/ দোয়েলের গান কেউ পছন্দ করছে না/ কোয়েলের গান কেউ পছন্দ করছে না/ পৃথিবীব্যাপী এখন শুধু/ পাতা ঝরার শীতার্ত গান ছাড়া/ অন্য কোনো ধ্বনি নেই’। সুদূর আমেরিকায় থেকেছেন বলে কেবল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেই নয়, স্বদেশের গণ্ডিতেও যে অভিন্ন কথা প্রযোজ্য, তা অনুধাবন করা যায়, যখন কবি বলেন, ‘আমাদের লাল, নীল, সবুজ পাতাগুলো,/ আমাদের প্রিয় পাতাগুলো ঝরে পড়ছে/ স্বাধীনতা যুদ্ধের সৈনিকের মতো ঝরে পড়ছে’। কিন্তু এই দুঃসময়ের দুর্বিনীত প্রভাবে কবি কি তার আশাবাদের গান থামিয়ে দেবেন? মানুষকে জাগিয়ে তোলার গান গাওয়া থেকে বিরত থাকবেন? না, থামতে কবি চান না। চান না বলেই শেষ স্তবকে উচ্চারণ করেন, ‘সমস্ত পৃথিবীর ঝরা পাতাদের চিৎকার ছাপিয়ে/ ভূকম্পনে বিধ্বস্ত গ্রামের মন্দিরে/ ঘণ্টাধ্বনির মতো জলোচ্ছাসের পরের প্রথম ভোরের/ আজানের মতো,/ কবি তার উত্থানের গানটি গাইবে/ অসময় বলো, দুঃসময় বলো,/ গান থামবে না।’

বস্তুত, গান বা কবিতার মাধ্যমে শিল্পীরা যেমন সময়ের অশুভ চিত্র তুলে ধরেন, তেমনি গান-কবিতা দিয়েই সময়ের অশুভত্বকে দূর করতেও চান। এই অশুভ বিতাড়নপ্রচেষ্টা প্রত্যেক জীবনবাদী কবি-শিল্পীদের জন্যেই একটি প্রিয় বিষয়, অলিখিত দায়বদ্ধতার মতো। শহীদ কাদরীও বারবার চেয়েছেন কবিতার হাত ধরেই অশুভত্বের প্রতিবাদ করতে, শুভকে স্বাগত জানাতে। ‘যদি মুখ খুলি’ কবিতায় লিখেছেন, ‘আমি জানি গুপ্তঘাতকেরা/ ছড়িয়ে রয়েছে আমার শহরে।/ তাদের নিধন চেয়ে কবিতাকে অস্ত্রের মতো/ ব্যবহার করতে চেয়েছি আমি বহুবার।’ এই চাওয়া বা আকাঙ্ক্ষা যে কবিহৃদয়ে সর্বদাই জাগ্রত ছিলো, তার প্রমাণ মেলে একের পর এক যুদ্ধবিরোধী কবিতায়। বিখ্যাত সেই ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’তে সমস্ত যুদ্ধ ও যুদ্ধ সরঞ্জামের স্থলে তিনি ভালোবাসা ও গোলাপকে স্থান দিয়েছিলেন, ‘গোধূলি গান’-এও তেমনি একাধিক কবিতা আছে যেখানে খুব স্পষ্টভাবেই যুদ্ধ ও যোদ্ধাকে নিরস্ত হতে বলছেন।

‘প্রার্থনা করেছি আমি উত্থান তোমার কণ্ঠস্বরের’ কবিতায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কুখ্যাত সেনানী, হিটলারের সবচেয়ে ভয়ংকর অনুসারী জেনারেল আইখম্যানের প্রসঙ্গ এনে বলেছেন, ‘প্রতিদিন কয়েকশো মানুষকে/ গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে/ কেন যে আইখম্যান আপন বাসায় ফিরে এসে/ নিপুণ আঙুলে বাজাতেন তাঁর/ লিভিং রুমের গ্র্যান্ড পিয়ানোটিকে?/ মৃত্যুগামী মানুষের আর্তনাদ থেকে/ হন্তারকদের প্রতিনিধি আইখম্যানও কি চেয়েছিল নিস্তার একদা?’ সকল মানুষই, সে যত হিংস্রই হোক, একসময় শান্তি চায়, শান্তিরই অন্বেষণ করে। শহীদ কাদরী সে রকম কথাই বলতে চেয়েছেন। ‘জেনারেল, তোমাকে’ কবিতাতেও যুদ্ধ, ধ্বংস অপেক্ষা প্রকৃতি ও মানুষের শুভ ও সুন্দরই বড় হয়ে উঠেছে। স্নিগ্ধ নিসর্গই হয়ে উঠেছে মানুষের প্রকৃত গন্তব্য। যুদ্ধ ও ধ্বংসের বিরোধিতাই হয়ে উঠেছে কবির আরাধ্য। এই যুদ্ধবিরোধিতা ও শান্তিকামিতার নান্দনিক উদাহরণ এই কাব্যের ‘যুদ্ধ’, ‘আমাদের শেষ গানগুলো’, ‘উত্তর নেই’, ‘হন্তারকদের প্রতি’, ‘হত্যার স্মৃতি’ নামক কবিতাগুলো। ‘হত্যার স্মৃতি’ কবিতায় কবি নিজের শৈশবের ফড়িং, কাক, পিঁপড়েদের মতো নিরীহ প্রাণীদের খেলাচ্ছলে হত্যার কথা বলেছেন। পরিণত বোধে এসে এগুলোর জন্য কিছুটা অনুতপ্ত বলেই মনে হয়। ‘উত্তর নেই’ কবিতায় কোনো কোনো মানুষের জীবন কেন এতো নিরাপত্তাহীন হবে, সে প্রশ্ন তুলেছেন। কোনো কোনো রাষ্ট্রনায়ক কেন হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠবেন? কোনো কোনো নৃপতিদের কেনই বা এতো সাম্রাজ্য বিস্তারের দরকার হয়? এসব প্রশ্নের মাধ্যমে শান্তির কথাই বলতে চেয়েছেন কবি।

‘হন্তারকদের প্রতি’ কবিতায় কচি লেবুপাতার মতো ঘাসের শক্তিকে স্মরণ করে বলেছেন, ‘জেনারেল, তোমার ট্যাংকের চেয়েও/ ক্ষমতাসম্পন্ন অপরাজেয় গ্রোসযুগের/ গানের মতো, অবিনশ্বর/ রবীন্দ্রনাথের কবিতার পঙক্তির মতো বারবার/ বারবার ফিরে আসে তারা/ এই দুঃখভারাতুর গ্রহের আঁখিপল্লবের মতো।’ এই সবুজ ঘাস তথা স্নিগ্ধ আর শান্তিপূর্ণ জীবনকে স্থিতিশীল করতে আমাদেরকে যে শুভবোধের কথা বলতে হবে, শান্তির গানগুলোকে ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে, এ কথা ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছেন কবি। করেছেন বলেই যে হন্তারকদের কারণে আমরা প্রত্যেকেই একেকজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানুষ হয়ে পড়েছি. তাদের উদ্দেশে কেবল সাবধানবাণী উচ্চারণ করেই ক্ষান্ত হননি, এই অন্ধকার সময় থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য মানবিক বন্ধনের, মানবপ্রেমের, ভালোবাসার গানগুলোকে বারবার গাইবার কথ বলেছেন। উচ্চারণ করেছেন :

রাত্রি যেমন নক্ষত্রের পক্ষে
গাছগুলো যেমন নতুন পত্রালির উত্থানের পক্ষে
নদীগুলো যেমন কল্লোলিত ধ্বনির পক্ষে
ফাঁসির আসামি যেমন ক্ষমাপ্রাপ্তির পক্ষে
আমাদের গানগুলোকে
দাঁড়াতে হবে সন্তানসম্ভবা মহিলাদের পক্ষে
এই গ্রহের প্রতিটি
ঘাসের শিখার পক্ষে।
এখন সেই দুঃসময়, যখন
আমাদের গাইতে হবে
আমাদের শ্রেষ্ঠ গানগুলো।

(আমাদের শেষ গানগুলো)

মানুষ, একদিন তার আত্মরক্ষার জন্য, খাদ্য সংগ্রহের জন্য অস্ত্র আবিষ্কার করেছিল। সেই অস্ত্রই আজ তারা ব্যবহার করেছে স্বজাতি হত্যায়, সভ্যতা ধ্বংসে। তৈরি করেছে হিরোসিমা, অশউইৎজ, বেলসেন, নাগাসাকি, একাত্তরের বাংলাদেশ। এখনো করে চলেছে অবিরাম। বিশেষত একুশ শতকের শুরুতে এসে মানুষের সেই প্রবণতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাদরীর ভাষায়, ‘আজ আবার উদ্যত ছুরি মানুষের হাতে/ওর পায়ের নিচে/ পিষ্ট হচ্ছে নারী,/ শিশুরা নিহত হচ্ছে চতুর্দিকে! (মানুষ, নতুন শতকে)। এই অন্ধকারাচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে, অরাজকতার বিরুদ্ধে কবির কলম চিরদিন সোচ্চার।

২.

‘গোধূলির গান’-এর কয়েকটি কবিতা ষাটের দশক, তথা কবির তরুণ সময়ের, কয়েকটি কবিতায় কোনো সাল-তারিখ না থাকলেও সেগুলো যে কবিপর্বের প্রথম দিককার, তা কিছুটা স্বরে আর কিছুটা কবিতার বক্তব্যে অনুমান করা যায়। আর অনূদিত যে ১৩টি কবিতা, তার কোনো কোনোটির নিচে ভিনদেশি কবির নাম না থাকলে, তা কাদরীর কবিতা হিসেবে গৃহীত হওয়া অমূলক হতো না। প্রথম তিনটি কবিতা চিলির আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিপ্লবী কবি পাবলো নেরুদার লেখা। সুসময় কতো ধীরে ধীরে আসে সেটা বোঝাতে গিয়ে কবি লিখেছেন, ‘কী দীর্ঘ অভিযাত্রা বসন্তের। সমস্ত শীতকাল ধরে/ বসন্ত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।/ সময় তার পাদুকাজোড়া খুইয়ে ফেলেছে।/ একেকটা বছর সম্পূর্ণ একটা শতাব্দীর মতো দীর্ঘ মনে হয়।’ এছাড়া মিশরের কবি কনস্তানতিন কাভাপি’র দুটি, গ্রিসের কবি ইয়ান্নিস রিতসোসের একটি, চেক প্রজাতন্ত্রের কবি আন্তোনিন বার্তুসেকের দুটি এবং পাঁচ জাপানিজ কবি তাকুবোকু ইশিকাওয়া, আকিকো ইয়োসানো, শিগেহারু ইকানো, চুইয়া নাকাহারা ও কোতারো তাকামুরা এঁদের একটি করে কবিতার অনুবাদ আছে বইটিতে। এই কবিতাগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ও ভাষার কবিতার একটা আস্বাদন লাভ করা যায়। বলাবাহুল্য, জাপানি কবিতাগুলোকে জাপানের মানুষের মতোই স্নিগ্ধ, কোমল ও শান্ত প্রকৃতির মনে হয়, সিরিয়ার কবিতাকে মনে হয় দেশ ও রাষ্ট্রনীতি নির্ভর।

‘গোধূলির গান’-এর যে কবিতাগুলো কবিজীবনের একেবারে সূচনাপর্বের, পরিণত জীবনে এসে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সেগুলোতে কবি কিছুটা হাত বোলাতেন তথা পরিমার্জনের প্রয়াস করতেন বলে ভূমিকা লেখকের, এবং পাঠকেরও মনে হতে পারে। কিন্তু, এ কথাও সত্য এই কবিতা কটি কবির সূচনাসুরকে চিনতে কিছুটা সহযোগিতা করে। যেহেতু তিনি প্রয়াত তাই একথা স্মরণ করেও প্রাক্কথক সাজ্জাদ শরীফ বলেছেন, ‘তবে আমরা এ কথা নিশ্চিভাবে বলতে পারি যে এ কবিতাগুলো না বেরোলে শহীদ কাদরীর কবিপ্রতিকৃতির কিছু রেখা চিরকালের জন্য অনঙ্কিত রয়ে যেত।’ কথাটি যে সত্য, তা গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলো পাঠ করতে করতেই অনুধাবন করা যায়।

পাঠকের মন্তব্য Login Registration