লড়াই মেদিনীর

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০|১৬:১২:৩৬ মি.


সম্পাদক

প্রকৃতি দিয়েছে অনেক। নিয়েছে কী কিছু? মানুষ প্রকৃতিকে ব্যবহার করেছে নিজের প্রয়োজনে। ব্যবহার করেছে নিজের ইচ্ছেমতো। অবশ্য ইচ্ছেকে চেপে ধরেছে সামর্থ্য। আবার কখনও ধরেছে সংকীর্ণতায়। অর্থাৎ মানসিক ইচ্ছার বৈকল্যে। বাঙালি বদ্বীপের মানুষ। তার চারধারে প্লাবন ভূমি। মাঝখানে বাড়ির ভিটে। ওতেই সাতপুরুষের বাস, বেড়ে ওঠা, বাসন-কোসন, গোয়াল, রসুই, শুকনো বীজের উঠোন। জড়িয়ে গড়িয়ে ধরে ঘর-দুয়ার। এক দেউড়ি থেকে অন্য দেউড়ি কুলির দূরত্বে। জড়াজড়ি করে থাকে। একের ঘরের চালের বৃষ্টির ছাঁট, অন্যের ভিটের মাটি গলিয়ে দেয়। তাই নিয়ে বাধে লড়াই। বাধে সীমানার ঝগড়া।

তবু গলাগলি করে থাকা। নাক ঢুকে যায় অন্যের জানালায়। চিংড়ির বড়ার ঘ্রাণ ক্ষুধাকে তাতিয়ে তোলে পড়শীর। ঝগড়া থিতিয়ে গেলে, বাড়ির কারও অসুখ হলে আবারও শুরু হয় সুপক্ব রান্নার বাটির আদান-প্রদান। এভাবেই পরম মমতায় ভোর হয়। সকাল আসে মোরগের ডাকে। সকাল ডাঙ্গর হয় গো-চনার গন্ধে। দিন আড়মোড়া ভাঙে ফসলের মাঠে। কাচির ঝিলিক ছড়ায় রোদের পরশ।

মাঠের চাষিটি স্বপ্ন দেখে। ছেলে জোয়ান হয়। পড়াশুনার কড়িকাঠ ডিঙিয়ে শহরে। শহুরে সাহেবের জীবন। একসময় কেরাণীর জীবন দিয়ে শুরু। ভারাক্রান্ত ছাপোষা জীবন। একসময় ডাল-পালা মেলে। গাঁয়ের শেকড় ছেড়ে, শেকড় গাড়ে শহরে। শহুরে জমি মূল্যবান হয়ে ওঠে। এখানে ফসলের বদলে জমিতে টাকা ফলে। এখানে সড়কের বদলে দেয়াল ওঠে, সীমানার দেয়াল। হয়তো পড়শীরা হাঁটার জায়গা ছাড়ে কোন মতে। কেউ বা ছাড়েও না। আবার লড়াই সীমানার। যা একদিন শুরু হয়েছিল গাঁয়ের ভিটায়।

মূল্যবান একহাতও ছাড়ে না কেউ। তাইতো মৃতের দেহ খাটিয়াতে শোয়াতেও দেয়াল ডিঙাতে হয়। অশক্ত শরীর চিকিৎসায় নিতে পাঁজাকোলে ছুটতে হয় কোনো সুপারম্যানকে। পড়শী ভাবে তার এ অবস্থায় পড়তে হবে না কোনদিনও। তবুও তিলমাত্র নাহি ছাড়ে সূচগ্র মেদেনী। জীবনের চেয়েও মূল্যবান শহুরে মাটি। গলিপথ সরু থেকে সরু হতে থাকে, হয়ে পড়ে কানাগলি। সেখানে আগুন-পানির যাতায়াতও বড় সঙ্গীন। এইতো ঢাকা থাকা শহর ঢাকা। মানুষ পড়াশুনা করছে কিন্তু শিক্ষিত হচ্ছে না। অধিকার সচেতন হচ্ছে কিন্তু অন্যের অধিকার দিচ্ছে না। এতে যদি কল্যাণ হয়ে যায় কারো! কল্যাণ চিন্তাটুকুও হারিয়েছে শহুরে মানুষ।

চিন্তাগুলো আজ বিক্ষিপ্ত। একজন আত্মীয়ের শেষ যাত্রায় শামিল হতে গিয়ে। তার পরকাল চিন্তায় মসজিদ গড়েছেন কিন্তু নিজের পৈতৃক বাড়ির গলিকে সড়কে পরিণত করতে পারেননি। ভাবলাম, এ শহরে জন্মেছি, এ শহরই হয়তো বিদায় জানাবে আমাকে। কিন্তু কীভাবে? আরেকটি নগরের পরিকল্পনা কী উঠে আসবে না পরিকল্পকদের মানসে?
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration