দিলাম ছড়াইয়া রে

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০|১৯:৪৩:২৯ মি.


সম্পাদক

পথে ছড়ানো ধুলিকণা। পথের সাথীই দিবারাতি। মাড়িয়ে যায় সকলে। পায়ে চলা মানুষই অনুভব করে শুধু। পাদুকা জড়ানো মানুষ, ও নিয়ে ভাবে না। মাঝে মাঝে মলিনতা ঝেড়ে নেয় শুধু। পাদুকা উজ্জ্বল হয়ে উঠে। উঠে মন চনমনিয়ে। একদা গবুচন্দ্র রাজা ধরণী ঢাকার পণ করেছিল। তা করতে হয়নি তাকে। আজকাল নগর পিতাও পণ করে ধুলি ঢেকে দেবার। তা-ও সম্ভব নয়। নগর সভ্যতায় পিচ ঢালা পথ গাড়ির। ফুটপাত হয় পথিকের। পথের দু’পাশে ছড়ানো থাকে দৃষ্টিনন্দিত সজ্জা। হয়তো প্লাস্টিক ফুল বা শিল্পীর কারুকাজ। ছড়ানো শোভায় দৃষ্টি বুলাবে পথিক। ছিটানো নদীর জলের সোঁদাগন্ধে ভরবে মন।

পথিকের চোখ প্রশান্ত হলেও নাকে স্বস্তি নেই। কেননা নগরের পথের দু’পাশে ছড়িয়ে আছে ময়লার স্তূপ। জায়গায় জায়গায় ভাঁগাড়। বেলাবেলি ময়লা তুলে নেয়ার সংকট। মানুষ নিজে পরিচ্ছন্ন থাকে। কিন্তু নিজের প্রয়োজনে চারপাশকে অপরিচ্ছন্ন ক’রে তোলে। ব্যবহারের উচ্ছিষ্ট দিয়ে, নিজের নোংরা দিয়ে। অভাব শুধু সচেতনতার। অভাব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার। বর্জ্য নাকি আজকাল বিদ্যুৎশক্তি হতে পারে। আলোকিত করতে পারে কানাগলি। বিষয়টি এখন আর ব্যক্তি বা পরিবারের দায় হয়ে নেই। দায় স্থানীয় সরকারের। যারা করের টাকায় পরিচ্ছন্ন রাখবেন চারপাশ। উন্নত করবেন পরিবেশ। পথিক হাঁটবেন সোল্লাসে। হাঁটবেন মুখোশ ছাড়া, নাকে হাত না রেখে।

পথের দু’ধারে ছড়ানো থাকবে ফুলের কেয়ারী। ছড়াবে সুবাস আকাশে-বাতাসে। উদ্যান তৈরি হবে সমবেত জনতার বসতির কোণে। অবসর ক্ষণগুলো মানুষ কাটাবে গাছের ছায়ায়। জিরাবে পথ-ক্লান্তজন, শান বাঁধানো আসনে। শিশুরা খেলবে খোলা ময়দানে দলবেঁধে। বাড়াবে সাহস, শক্তি, আয়ু। জুড়াবে গলির মোড়ের কোলাহল। কমবে রোয়াকের আড্ডা আর ইভটিজিং। নারীরা হাঁটবে পথে স্বস্তির নিঃশ্বাসে। স্বস্তিতে দিবানিদ্রা দেবে শিশু ও বৃদ্ধেরা। নিরাপদে পথ চলবে নিশ্চিন্ত পথিক। গড়ে উঠবে বাসযোগ্য নগরী এদেশে।

চিন্তাটি শুধু নগরের পথ নিয়ে নয়। পথ তো বয়ে গেছে গাঁয়ের পাশ দিয়েও। সেখানেও হেঁটে চলে গাঁয়ের মানুষ। চলে অনেক বাহনের সারি। শহুরে সুবিধা ছড়িয়ে পড়েছে গাঁয়ে। নগরের জঞ্জালও এখন জুটেছে গাঁয়ে। কিন্তু সকল সুবিধা কি জুটেছে? জোটেনি। জোটেনি শিক্ষা, স্বাস্থ্যের অপার সুযোগ। গড়েনি সামাজিক সমাবেশের মিলনায়তন। একারণে গাঁয়ের মানুষ নগরমুখী। এ স্রোত থামাতে হবে এখনই। ছড়াতে হবে নগর সুবিধা সর্বত্র।

ছড়িয়ে দেবার আয়োজন করতে হবে। ছড়িয়ে দিতে হবে নাগরিক সুবিধা জনে জনে। বৈষম্য কমাতে হবে শহর ও গাঁয়ের। পথিককে হাঁটতে দিতে হবে পথে। সরাতে হবে পথের আবর্জনা, ছড়াতে হবে সুবাস। নির্মল করতে হবে বায়ু। বৃক্ষের গোড়ায় ঢালতে হবে জল। তবেই তো হাঁটবে মানুষ শ্বাস টানা বুকে। তবেই তো জাগবে মানুষ দেশপ্রেমের সুখে। ছড়াতে হবে সুখ, তাড়াতে হবে দুখ।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration