নগর দর্শন

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বুধবার ২৯ জানুয়ারী ২০২০|২০:০৩:২৬ মি.


সম্পাদক

বোগল তলে বোচকা। সামনে দৃষ্টি প্রসারিত। অবাক চোখে দেখছে সুউচ্চ স্থাপনা। মাঝে মাঝে পা ফসকে পড়া। এ দৃশ্যটি প্রায়শই নগরে দেখা যেত। আগে গ্রামের বালক বা আধা বাউল মানুষ নগরের স্থাপনা দেখতে নগরমুখী হতো। তাদের এ ধরনের পরিদর্শন নগরবাসীর হাসির খোরাক জোগাত। আজ আর সেদিন নেই। গাঁয়ের মানুষ অর্থনৈতিক টানেই এখন শহরবাসী। না হয়ে উপায় নেই। নিদেনপক্ষে সন্তানের বিদ্যা অর্জন, সুস্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসা, বউয়ের জন্য দামি শাড়ি—সবই মহানগরে স্তূপীকৃত হয়ে আছে। গায়ে গা লাগানো অট্টালিকার মতো। যেনো বিনা নির্মাণে নাহি দেব সূচগ্র মেদেনী। ঘিঞ্জি নগরী, প্রাণ হাসফাঁস লগ্ন, তবুও সবাই শহর জীবনে মগ্ন। 

পরিকল্পিত নগরীর গান বাজছে মাইকে। ভাইয়েরা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গেছেন। বোনেরাও পাশে। ওনাদের গতি করার জন্য রয়েছে গণতন্ত্র। ধনতন্ত্রের বাহারে আলোকিত গলি থেকে রাজপথ। ব্যানারে-পোস্টারে ছেয়ে আছে পথিকের মাথার ছাদ। বাতাসে নড়ছে শোভিত প্রাচীরপত্র। তাতেও লেগেছে উন্নয়ন। শীতের কুয়াশা যেনো ছিঁড়ে না ফেলে। সেজন্য রয়েছে পলিথিন আস্তরণ। অর্থাৎ লেমিনেটেড জামা। খুলে ফেললেই নগ্ন হয়ে লজ্জায় পড়ে যাবে পথে, পথিকের গায়ে। তাই তো কাগজের গা মোড়া পলিথিনে। যাতে লেখা হয়েছে প্রার্থীর কাহন। পড়ে পাঠকের মন পোড়ায়, চোখ জুড়ায়। পাঠক গণতন্ত্রের উঠানে চলাফেরা করে। সিদ্ধান্ত নিতে চায়— দেবে! কাকে দেবে! 

আজকাল নগরের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য প্লাস্টিক পেইন্টও হচ্ছে। মাঝে মাঝে ঝলকাচ্ছে কৃত্রিম ঝর্ণা। ছাদবাগান হচ্ছে, ল্যা-স্কেপ উঁকি দেয় মাঝে মাঝে। হচ্ছে চত্ত্বর, দাঁড়াচ্ছে মূর্তিমান ভাস্কর্য। তারপরও আবর্জনার স্তুপ, নাক চেপে পথচলা, খোলা নর্দমা দখল করে আছে মশক। এখন নগরপিতা হবার লড়াইয়ের মৌসুম। শিক্ষার্থী ও অসুস্থ বৃদ্ধরা নাচার। শিশুরা চিৎকার করে কেঁদে উঠছে খাইরুন সুন্দরীর সুরে। বিকৃতি বিদ্ধ করে সৃজনশীল মানুষ ও সংস্কৃতিকে। তবুও বিকার নেই কারো। শব্দ দূষিত হচ্ছে। চিৎকার করে কাঁদছে শহর। দেশের আদালত সাড়া দিয়ে বর্জ্য সম্পর্কে সতর্ক করছে লড়াকুদের। লেমিনেটিং করা মালপত্র সরাতে বলছে প্রতিযোগীদের। হয়তো নির্দেশক কর্তৃপক্ষ আদালতের কথা মালুম করতে পারছে না। তাই চুপচাপ। অথবা তারা প্রার্থীর প্রতি খুবই সদয়। সবার পকেট চিন্তা করে পোস্টার সরাতে বলেনি, বলেনি পুনঃমুদ্রণের কথা।

আকাশ ছেয়ে আছে উৎসবের নিশানে। উড়ছে নিশান, নিশানা নগরভবনের আসন। নিতেই হবে, পেতেই হবে, জিতেই যাবে আসন। কিন্তু ছাপানো যন্ত্রণার স্মারক যাবে কোথায়? না, শীত গড়িয়ে বসন্তেও উড়তে থাকবে লেমিনেটেড পোস্টার। চিন্তা কী! বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রয়েছে নগরবাসীর করের টাকা। নতুন নগর পিতারা এসেই সন্তানদের দায়িত্ব নেবেন অকাতরে। প্রত্যাশা নতুন নগর গড়ার। যেখানে গায়ে গায়ে লেগে থাকবে না মানুষ, গাড়ি, বাড়ি। লেগে থাকবে না মশার সাথে আড়ি। মানুষ কাজ শেষে ফিরবে বাড়ি, সাত তাড়াতাড়ি।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration