উদ্বাস্তু নিবাস

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারী ২০২০|১৯:৪৭:২২ মি.


সম্পাদক

মানুষের জন্য পৃথিবী। পৃথিবী মানুষের অস্থায়ী নিবাস। প্রকৃতি প্রদত্ত আয়ুষ্কাল নিয়েই  ঘুরে বেড়ায় মানুষ। ঘুরে বেড়ায় যাযাবর ও আদিবাসী। ঘুরতে ঘুরতে কোথাও ততোধিক স্থায়ী আবাস নির্মাণের চিন্তায় মগ্ন হয়। মগ্নতা আজীবনেও কাটে না কারো কারো। পরিবারে শিশু জন্মাবার পর থেকেই অভিভাবক চিন্তার সূত্রপাত ঘটায়। করে শিক্ষার পরিকল্পনা। তৈরি করে বিত্ত অর্জনের চিত্রকল্প। সন্তান বড় হয় পিতার চিন্তায়। কিন্তু বড় হয়ে সে সন্তান আয়ের সুযোগব্যয় চিন্তা করে ছাড়ে জন্মভূমি। উড়ে চলে দিগন্তের ওপারের দেশে। যেখানে অর্থের আস্ফালন জীবনের উলম্ফনকে নিশ্চিত করে। উন্নত জীবনের ফানুস ডাকে হাতছানি দিয়ে। মানুষ ছোটে জাহাজে।

সেই মানুষই উদ্বাস্তু হয়। দেশ থেকে দেশে কাঁটাতার ডিঙায়। কখনো সদর্পে, কখনো লুকিয়ে ছাপিয়ে। বিত্তবান দেশ কখনও তাকে সাদরে বুকে টানে, কখনো জঞ্জাল হিসেবে তাড়িয়ে দেয়। না পারলে দেশের উদ্বাস্তু শিবিরে নিশিযাপনের ব্যবস্থা হয়। এভাবে কারো কেটে যায় অনেক বছর। কেটে যায় জীবনের অনেক বসন্ত। কেউবা মলিন মুখে ফেরে আপন ঠিকানায়। যারা ফেরে না তারাই উদ্বাস্তু। তারা ঐ দেশের মূলধারার অর্থনীতিতে নিজেকে মানিয়ে নেয়। দক্ষতাও করায়াত্ত করে। কেউ কেউ সফলও হয়। হয় বিত্তশালী। বুক চিতিয়ে মাঝে মাঝে দেশে থাকা স্বজনদের বিত্তকে গরিমা দেয়।

তারপরও মন কেমন করে। কী যেনো নেই, কী যেনো পাওয়া যাচ্ছে না। কিসের যেনো সংকট মনের মণিকোঠায়। সে কী মর্যাদার, নাকি কুরবানীর বাসী গোশতের সুরওয়ার স্বাদ। মুখে আসে কিন্তু পাশে থাকা প্রতিবেশীকে বলা যায় না। বলা গেলেও তা মাতৃভাষায় নয়; অন্য ভাষায়। দরোজায় পায়ে আঘাত পেলে— ‘উহ্ মাগো’ চিৎকারেও কোনো সহানুভূতি মেলে না। কেউ দৌড়ে আসে না আহা, উহু বলে। দিনের কর্মব্যস্ততার পর সন্ধ্যা আসে। যেমন আসে যৌবনের পর প্রৌঢ়ত্ব। তখন দেশের ভিটে-মাটি টানতে থাকে অবিরত। টানলেই কী ফেরা যায়! জীবনচক্র যে ঘুরে গেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। তখন শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থা। দিশেহারা মনে হয় নিজেকে।

জগত জুড়ে উদ্বাস্তুর প্রবাহ চলছে। সব উদ্বাস্তুই উন্মূল। কিন্তু সবাই একটি ইসরাইল পায় না। কেউ যেতে যেতে পথ হারায়। কেউ ডুবে মরে অতল সাগরে ফুটো নৌকায়। কী সাহসে ভর করে ছুটছে মানুষ! কেবল ঈশ্বর-ই জানেন। পরিবেশ এবং প্রকৃতিও কী ছুটছে প্রান্ত বদলের আশায়? তাই কী আজ তুষারপাত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। মেরু অঞ্চলের দেশগুলোতে কমছে ঠা-ার প্রকোপ। হয়তো প্রকৃতিরও উদ্বাস্তু হতে মান চাইছে। চাইছে বিশ্বপরিভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে। তাহলে মানুষেরই দোষ কী পরিব্রাজক হতে? 

পৃথিবী তো একটি পান্থশালা, অস্থায়ী নিবাস। মানুষ প্রকৃতিরই সন্তান। প্রকৃতির রঙ বদলের সাথে মানুষের দেশ বদলে ক্ষতি কী? শুধু মধ্যবয়সে দেশের ভাটিয়ালি, বাঁশির সুর না ডাকলেই হয়। কেননা জোছনা তো সেখানেও মেলে।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration