মেলে না হিসাব

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারী ২০২০|১৫:০০:১১ মি.


সম্পাদক

জীবন অংকের খাতা নয়। যোগ-বিয়োগে ফল মেলে। জীবনের ফল মেলে না। জীবন খাতার শূন্য পাতাগুলো আঁকিবুকিতে ভরে ওঠে। কখন তা শিল্প হয়ে ওঠে, কখন শুধুই নিষ্ফল দাগ। কখনও সোজা কখনও বাঁকা। তাই বলে দাগকাটা থামানো যাবে না। ভুলে ভরা জীবনে কখনও কাকতাল আনন্দ জাগায়। তা-ও ক্ষণিকের তরে। না হয় জীবন শুধু নিষ্কম্প দিঘীর জল। এ জীবন মানুষের ভালো লাগে না। জীবনে চাই উত্থান-পতনের সমাহার। তবুও বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজতে খুঁজতেই বেঁচে থাকে। সংসারে আশা তাই একমাত্র ভেলা।

এমন নিস্তরঙ্গ জীবনকে তাতায় চোরের দল। চৌর্যবৃত্তি এ সমাজের এখন মহৎ পেশা। চোরেরাই বিত্তের বেসাতি করছে। জীবনের গতি বাড়াতে মানুষ কিছু ক্ষেত্রে মুঠোফোনের সাহায্য নেয়। এর মাধ্যমে আজকাল গরিব উপার্জকরা সামান্য অর্থ পাঠিয়ে দেয় দীনের কুটিরে। দিন শেষে জোটে ডাল-চালের পরমান্ন। সেখানেও দল বেঁধে চুরি। চোরেরা যান্ত্রিক কৌশলে বোকা বানিয়ে গরিবকে নিঃস্ব করছে অবিরত। মানুষ এর প্রতিকার ঠিক মতো পাচ্ছে না। হাহাকারে সাড়া মিলছে না এজেন্টের কাছে। এজেন্টরাও এই জালে খোয়াচ্ছে নগদ কড়ি। শুনে সান্ত্বনা দেবার কোনো কেরামতি জানা নেই আমার। শুধু করুণ চোখে তাকানো ছাড়া। 

দুর্জনের বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা দেশে। নীতি নৈতিকতার বালাই উঠে যাচ্ছে। এখন অনৈতিক কর্মকা-ের মানুষগুলো শার্টের বোতাম খুলে হাঁটে। আর সাধারণ ভালো মানুষেরা নুব্জ্য হয়ে পড়ছে ক্রমাগত। আসলে দেশটি কাদের? আদর্শ নেতৃত্বে স্বাধীন হওয়া এক ভূ-খন্ড, আজ অনাদর্শের চারণভূমিতে পরিণত। এটা কী ভাবনা ছিলো সংগ্রামী বাঙালির? বাঙালি ছাপোষা জীবন থেকে বেরিয়ে এসেছে রাজপথে। অঙ্কের হিসাব বলছে মাথাপিছু আয় বেড়েছে অনেক, বেড়েছে শিক্ষিতের সংখ্যা, বেড়েছে গড় আয়ু। সেই সাথে সমাজে ঠকবাজের সংখ্যাও যদি বাড়ে। তাহলে বাড়তি আয়ুর জীবন কী করে কাটবে দেশের মানুষ?

মানুষের জন্মের ওপর নিজের কোনো হাত নেই। কে কোথায় জন্মাবে—তা ওপরওয়ালাই জানেন। এটা মানুষের নিয়তি। কিন্তু জন্মাবার পর দেশটাতো তার জীবন-যাপনের উপযোগী হতে হবে। উপযুক্ত করার দায় কী পূর্বসূরীদের ছিলো? নাকি বর্তমান প্রজন্মের? উত্তর দেয় অনেকেই, কিন্তু সদুত্তর মেলে না। সদুত্তর দেবার মানুষ তৈরি করতে হবে। এজন্য লাগবে বাঙালির ঐতিহ্য সম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা। গড়ে তুলতে হবে কর্মমুখী শিক্ষা। যে শিক্ষায় এদেশে একসময় গ্রামগুলো ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। গ্রাম স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেই দেশে নীতি-নৈতিকতার সঙ্কট দূর হবে। দূর হয়ে যাবে চোরের দল। মানুষের জীবনের অংক কিছুটা হলেও সঠিক হবে। মিলবে মাস শেষে বা দিন শেষে আয়ের হিসাব। ভুলে ভরা জীবন আর শুষ্ক মনে হবে না নদী মেখলা এদেশে। মানুষের আয়ু তখন পরমায়ুতে রূপ নেবে। এদেশ হয়ে উঠবে ভালো ও দক্ষ মানুষের খনি।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration