পরিশীলিত মানুষ

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

শনিবার ১৮ জানুয়ারী ২০২০|১১:১৫:১৫ মি.


সম্পাদক

মানুষের জন্য শিল্প। শিল্প একটি চর্চিত সুন্দর। যা মানুষকে করে পরিশীলিত মানুষ। যিনি সুন্দরের পূজারী। তিনি সমাজের আর দশজন সাধারণের চেয়ে একটু আলাদা। তবে অবশ্যই তা মানবিক গুণের প্রশ্নে। কেননা শিল্পী মাত্রই একজন সংবেদনশীল শাদা মানুষ। যার হৃদয়ে প্রকৃতির নানা রঙের পরিস্ফুটন ঘটে। আর তাই সাধারণরা তাকে দেখে-শুনে মুগ্ধ হয়। তার কাজের প্রশংসা করে।

শংসা বচন সহজে অর্জিত হয় না। আর বাঙালি প্রশংসায় কৃপণ। সমাজ জীবনে এ চর্চাটি নেই বললেই চলে। অথচ পরিবার থেকেই প্রশংসার চর্চাটি করা উচিত। সন্তান মানুষ করতে হলেও সন্তানের ছোট ছোট সাধু কাজের প্রশংসা করতে হবে। তা হলে সে শিশুটি আরেকটি ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহ পাবে। একসময় সে-ও  অন্যের ভালো কাজের প্রশংসা করতে শিখবে। তখন সমাজে শংসাবচন বিনিময় হবে। গড়ে উঠবে একটি সম্প্রীতির সমাজ। যার প্রভাব পড়বে দেশের সমাজনীতির চর্চায়। সংস্কৃতি যার সূত্রপাত করতে পারে।

আমরা কী শিল্পচর্চার মানুষগুলোকে আদর্শ মানুষের কাতারে ফেলতে পারি না? জগতে এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। আমাদের দেশেও যে নেই তা নয়। কিন্তু তার আগে প্রশ্ন শিল্পীরা কি সবাই প্রকৃত মানুষ? একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষের অবয়ব কী ফোটে সবার সামনে? এখানে দুটি উত্তরই আসবে। উত্তর একটা হলেই ভালো হতো। তা হলে দেশ বাঁচতো।

দেশ বাঁচলেও আজকাল শিল্প ও শিল্পী বাঁচে না। শিল্পীরা প্রায়শই রুগ্ন ও চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়ছে। হাত পাতছে রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে। সাহায্য কেউ কেউ পায়ও। আবার কেউ অভিমান নিয়ে দূরে সরে থাকে। কেননা শিল্পীরা নাকি অভিমানী। অভিমান তারই থাকে, যার ভেতর কিছুু মেধা-দক্ষতা থাকে। রাষ্ট্র ফলবান সময়ে ফিরে তাকায় না—এসব পরিশীলিত মানুষের পানে। মূল্যায়ন করে না যথাসময়ে। অথচ শিকড় ছাড়া যেমন গাছ বাঁচে না, তেমনি সংস্কৃতি ছাড়া একটি সভ্য জাতি বাঁচে না।

শিল্পকে সঠিক পথে চালিত করে কোনো না কোনো অভিভাবক সংস্থা। এদেশেও আছে নিশ্চয়ই। সেখানে কী পরিশীলিত মানুষরা দায়িত্ব পালন করছে? তারা কী সৃজনশীল চিন্তায় সমৃদ্ধ করছে দেশের সংস্কৃতি? সেখানেও কী দেশের দুর্নীতি সংস্কৃতির ছোঁয়া লেগেছে? না হলে, প্রশ্ন উঠছে কেন; সঠিক মানবসম্পদ বাছাইয়ে। কেননা সঠিক মানুষই তো প্রয়োজন মানুষের জন্য। নইলে শংসাবচন অর্জিত হবে কেমন করে? সেই পরিশীলিত মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ সমাজের নেতৃত্বে আসবেই বা কী করে? তৈরি হবে কেমন করে কলুষমুক্ত, ধর্ষকমুক্ত সমাজ। এ দায়িত্ব চর্চিত মানুষদের। যাদের কথা, কাজ ও আচরণে মুগ্ধতা ছড়ায়। মন্ত্রমুগ্ধ হয় দেশ।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration