নিষ্কলুষ আলো

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারী ২০২০|২০:০৯:৩০ মি.


সম্পাদক

সূর্যের আলো নিষ্কলুষ। চারপাশ ঠিকরে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু কুয়াশা ঢেকে দেয় তাকে। নিবু নিবু হয়ে আসে আকাশ। এমনই চলছে ক’দিন। দিনের আলোর দৈন্যতা। দীনতায় ভরে দেয় মানুষের মন। মানুষ ক্রমশই ক্ষীণতর হয়ে পড়ছে চিন্তায় এবং চেতনায়। শুকিয়ে যাচ্ছে শীতের নদীর মতো। মানুষ হারাচ্ছে মানবিক গুণ। পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া মানুষ; কেউ  বলতে পারছে না—পাশে মানুষ হাঁটছে কি না? না দুপেয়ে জীব চলছে। চলছে কোনো শিকারের সন্ধানে। শিকার কে এবং কী? অর্থ, বিত্ত না মানুষ? কে জানে?
মানবিকতা, মূল্যবোধ—এগুলো এখন অভিধানে। সমাজে ছিল একসময়। আজ হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। শুকিয়ে যাওয়া বিলের শামুকের মতো। যা পাখ-পাখালির ছিল খোরাক। মানুষে মানুষে বন্ধু। মানুষে মানুষে হাতে হাত রেখে চলবে। চলবে সমাজ সমুখপানে। তা কেনো যেনো হয়ে উঠছে না আজকাল। পরিবারগুলো কী সুসন্তান গড়ে তুলতে পারছে না। কীসের আকাল? সঙ্কট কোথায় শিকড় গেড়েছে? সমাজবিজ্ঞানীরা কী ভাবছেন? তাদের ভাবনা কী সমাজপতিরা হাতে নিচ্ছেন? মনে তো হয় না?
সন্দেহ কুয়াশার মতো ঘিরে আছে চারপাশ। দিনের সকালকেই সন্ধে মনে হয়। সমাজের মানুষ কী কিছুটা সংশয়বাদী হয়ে পড়েছে? তাদের সংশয় ও দ্বিধামুক্ত করবে কে? আসলে সমাজে এখন কোনো রোলমডেল বা আদর্শ চরিত্র নেই। যাকে দেখে অপেক্ষাকৃত তরুণরা পথ চলবে। কেননা সকলেই ব্যস্ত অনৈতিকভাবে সম্পদ শিকারে। তার শিকার কোন্ ভাঁগাড়ে পড়ছে তাতে কিবা এসে যায়? স্বার্থপর চিন্তার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। শিকারি জানে না তার গন্তব্য; জানে না কোথায় তাকে থামতে হবে। তারপরও সবকিছুরই শেষ আছে। প্রকৃতিই হয়তো নিজের নিয়মে থামিয়ে দেবে সব। কিন্তু তার আগে নিজেদেরই থামাতে হবে। ফিরতে হবে মানবিক বোধে। কেননা সমাজ ধুঁকছে।
আশার কথা যে কাজটি শাশ্বত বাংলা মায়েরা করে আসছে অনাদিকাল থেকে। একজন মাতা তার নবজাতকের জন্মের পর, তাকে ও তার সন্তানকে আশীর্বাদ করতে আসা মুরুব্বির কাছে যে উক্তিটি করে তা হলো— ‘দোয়া করবেন। আমার সন্তানকে যেনো মানুষ করতে পারি।’ একজন প্রসূতি মায়ের এই চাওয়াটিই হচ্ছে সুস্থ সমাজের চাওয়া। কেননা সমাজে মানুষের বড় সঙ্কট। মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গোটা সমাজ ভরে আছে শিকারিতে। এরা হন্যে হয়ে খুঁজছে শিকার। অথচ একটি পরিশীলিত, সুস্থ, সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজের জন্য চাই মানুষ। শুধুই মানুষ। যার কাছে প্রতিটি মানুষের দিন-রাত্রি হবে নিরাপদ। কোনো শঙ্কাই কাজ করবে না পুরুষ বা নারী বলে। কেননা শাশ্বত মায়েরা তো আছেন জাতির শিক্ষক হ’য়ে। মায়েরা জাগো।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration