প্রান্তরের ডাক

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

শনিবার ৪ জানুয়ারী ২০২০|১১:০৩:৩৫ মি.


এনাম আহমেদ

সময়ের চাকা ঘুরছে। আবর্তিত হচ্ছে ঘূর্ণাবর্তের মতো। কেউ কেউ একই বৃত্তে দাঁড়িয়ে। একচুলও নড়ছে না। কেউ চলছে পুষ্পক রথে। এমনি করেই বছর ঘুরছে বছরের পিঠে। ওজন বাড়ছে পৃথিবীর। শ্রমে ও ঘামে বাড়ছে কার্বন। নিঃসরণে মানুষ আঁইডাই। শুধু দূষণ বাড়ছে। নতশিরে উন্নত হচ্ছে মানুষ। মাথা নিচু না হলে তো কোনো গবেষণা বা অভিসন্দর্ভ হয় না। হয় না কোনো প্রমাণিত সত্যের প্রকাশ। মানুষ সত্য সন্ধানে আছে। কুড়িকে বিশ বিশ লেখা যায় কিনা। ভাবছে বছরের শুরুতে।

বিশ্বে উত্তাপ বাড়ছে। অর্থাৎ পারদ নামছে ক্রমশ। শীতার্ত মানুষকে সচকিত করে পুড়ছে বারুদ। ফানুস উড়ছে, পুড়ছে বনাঞ্চল, বাড়ি-ঘর। তারপরও পৃথিবীর মানুষ উষ্ণতা খোঁজে। খোঁজে সবুজ বনের ছাউনি। আশ্রয় খোঁজে উদ্বাস্তু সকল। খুঁজতে খুজতে ডুবে মরে। বাঙালিও মরে। তারা ছুটছিল উষ্ণতার খোঁজে। আমরা তা দিতে পারিনি। পারিনি ধোঁয়া উঠা ফেনাভাত, মাছের গরম সালুন দিতে। তবুও পুষ্পক রথ চলছে। মহাজনরাও চলছেন যথারীতি। ক্রম অবনতিশীল কুব্জটিকায়।

বালকেরা গলির মোড়ে উড়ছে কর্কের মতো। মাঠ নেই। নগর গলিই ব্যাডমিন্টনের ভরসা। সকাল-বিকাল জড়ো হয়ে আনন্দে চিৎকার। খেলার চেয়ে ধুলাই গায়ে মাখে বেশি। স্কুল ছুটি শেষ হলো বলে। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ শুকছে শিক্ষার্থীরা। মনের আনন্দে নানা বাড়ি, দাদা বাড়ি করছে কেউ কেউ। সন্তানদের গ্রাম চিনিয়ে আনা নাগরিক দায়িত্বেরই অংশ। অনেক বাবা-মা-ই তা করছেন। সাথে সাথে নিজেদেরকেও বলশালী করছেন। খোলা আকাশ আর ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু দেখতে গাঁয়ে যেতে হয়। নগরে জমি যে অনেক মূল্যবান আবাস। সকলে জড়াজড়ি করে থাকে।

খোলা জানালায় পুব আকাশের রোদ নেই। পার্শ্ববর্তিনীর আঁধার আছে। আছে খোলা নালার গন্ধ। আছে ভাঁগাড়ের উপচে পড়া ময়লার ঘ্রাণ। নগরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বড় সঙ্কট। গাঁয়ে এটি এখনও হয়ে উঠেনি। দম বন্ধ হয়ে আসে নগরে। তবুও জীবন এবং জীবিকা ধরে রাখে মানুষকে। ফাঁক পেলেই ছোটে। ধলেশ্বরীর তীর ঘেষে সরিষার ফুল। হাতছানি দিয়ে ডাকে। পরম মমতায় হাত বুলায় শরীরে।

দেখা হয় এপাড়ার কালামের সাথে ওপাড়ার পরিমলের। তারা সুখ-দুঃখের কাব্য বুনে চলে খেতের আল ধরে। বুক ভরে শ্বাস নেয় আগামীর। ফিরতে হবে যে, নতুন বছরে পুরাতন নগরে স্যাঁতা পড়া ছাদের তলায়। ঢাকায় ঢাকা পড়া জীবনে।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration