অন্বেষণে

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

শনিবার ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯|১১:৩৬:২২ মি.


সম্পাদক

দুপুররাতে টিপটিপ বৃষ্টি। শীতের রাতকে কাঁপিয়ে দেয়। খোলা আকাশের নিচে মানুষগুলোর রাত কী করে কাটে?  কেবল তারাই জানে। আর জানে না কেউ? শীতবস্ত্র বিতরণের মাত্রা কমে এসেছে। মাঝে-মাঝে দু’-একটা ছবি কম্বল হাতে ধরা। হাসি মুখ; কম্বল নিচ্ছে না দিচ্ছে বোঝা দায়। বদান্যতা কমে এসেছে সমাজে। উদার মানসিকতা কী তলানীতে ঠেকেছে এখন!

এমন একটি সকাল ‘শীতসকালের আবৃত্তি’ দিয়ে শুরু। শ্রোতা-আবৃত্তিকার উভয়ের শীতে ত্রাহিমধুসূদন। কে কাকে শোনে। আয়োজকদের কৃপায় আসরের কোণে ধোঁয়া উঠছে। ভাপা ও চিতই পিঠার চুল্লির ধোঁয়া। শীতের সকাল ভালোই জমে উঠছে ঠাণ্ডা আর গরমের সখ্যতায়। সকলের গায়ে কাপড়ের স্তুপ। যে যার  সামর্থ্য জাহির করছে। তবে হঠাৎ করে চেনা মানুষকে চেনা দায়। গলার স্বর দিয়ে বুঝতে হয় মানুষটি কামাল না তমাল। সেই ভরসাতেই চলছে আসর।

বেলা বাড়তেই ধরেণ্ডাপল্লী। সাভারের রাজাসন। ‘প্রতিভার জাগরণ’ দেখতে যাত্রা। আয়োজকরা আবৃত্তির আসর থেকে চারচাকায় করে ধরে নিয়ে গেলেন। কিছু কাজ আছে শীত তাড়ানোর। খোলা মাঠে উত্তুরে হাওয়ায় প্রতিভা অন্বেষণ করতে হবে। প্রতিভা যাচাইয়ে আমরা বিচারক। অনুষ্ঠানস্থলে গিয়েই টের পেলাম শীত এই এলাকার মানুষদের কিভাবে চেপে ধরেছে। সামিয়ানা প্রায় খালি। আয়োজক ও কিছু অতিথি শীত পোহাচ্ছে কাঁপুনি দিয়ে। ঘোষকের কণ্ঠ বাজছে জোরেশোরে।

বাঙালির সংযমজ্ঞান প্রায় শূন্য।  তা আর একবার প্রমাণিত হলো সতেরোজন বক্তার বক্তৃতার খায়েশ দেখে। কেউ না বলে না। মাইক তো আর সহজে পাওয়া যায় না। প্রধান অতিথি ফাদার বললেন, ‘এতোজন না বললেও চলতো। এ ধারা বাদ দিতে হবে’। শুনে মনে মনে কিছুটা উষ্ণতা অনুভব করলাম। প্রীত হলাম তাঁর পিতাসুলভ জ্ঞানে। আয়োজকদের শীতার্ত শ্রম, প্রতিযোগীদের উপস্থিতি ও আমাদের ঐকান্তিক চেষ্টায় কিছু প্রতিভার সন্ধান মিললো। খুশি হলাম সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা আজও থেমে যায়নি। গ্রামে-গঞ্জে, উৎসবে-পার্বণে আজও বাঙালি গলা ছেড়ে গায়। নেচে গেয়ে আমোদিত হয়। আমোদিত করে প্রতিবেশকে। কৃতজ্ঞতা জানালাম অন্বেষকদের।

এমনি করইে জড়িয়ে আছে বাঙালি। জড়িয়ে রেখেছে সমাজের স্রোতকে। হুহু ঠাণ্ডায় মাঠে বসে ভাবলাম-বাঁচি, আয় গলাগলি করে বাঁচি। শীতকাতর মানুষের দেশে হাতে হাত রেখে বাঁচি। আর খুঁজে ফিরি শেকড়ের মাটি। যেখানে লুকিয়ে আছে নানা মতের মানুষের একত্রে বেড়ে ওঠার মন্ত্র। জয় হোক মানুষের।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration