কী যে বলি

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯|১৮:২৮:২২ মি.


সম্পাদক

শীতের দিন ছোট। এর মধ্যেই বড়দিন এলো। চলেও গেলো। গোটা বিশ্বে যীশুর অমর বাণীর পরশ নিয়ে। আমাদের দেশটিও দোল খেলো ভক্তদের আনন্দে। আনন্দে মাতিয়ে গেলো বাঙালি জীবন। উৎসবটি আসে বাঙালির আলোচালের গুড়িতে ভর দিয়ে। পিঠাপুলির বিলি বণ্টন চলে এবাড়ি ওবাড়ি। উৎসবে তাড়িত হয় ছোট-বড় সকলেই। পাশাপাশি ঠাঁই পায় বেকারীর কেক। গোটা বিশ্বে ছুটির হুল্লোড় বয়ে যায়। কিছুটা পরশ নিয়ে আসে ইউরোপ-আমেরিকায় কাজ করা মানুষগুলোও।

দেশে ছুটে আসে বেশি দামে টিকিট কেটে। তাদের কাছে দুর্মূল্যের টিকিটও সোনার হরিণ হয়ে ধরা দেয়। ছুটে আসে নাড়িপোতা গাঁয়ে। বাপ-দাদার ভিটায়। সেখানে হয়তো আজ অপেক্ষায় নেই বয়স্করা। কিন্তু ঘরের খুঁটিতে জড়িয়ে আছে তাদের হাতের ছোঁয়া। ঘরের পেছনে খিড়কির পুকুর। মাছ পোটা দিয়ে ওঠে। মনে হয় এতেই আপনজনের দেখা মেলে। রসুঁই ঘরের কোণায় দাঁড়ানো ঝটকে যাওয়া বরই গাছটি ছোট ছোট ফলে সেজেছে জবর। নারকেল সুপারির গাছগুলো ডানা ঝাপটে বলছে—
—    এতদিন বাদে এলে? তোমারে চাইরদিকে দুই চোখে খুঁজতে খুঁজতে তোমার বাজান চইলা গেলো। খবর পাও নাই?
—    পেয়েছি। কিন্তু ছুটি পাইনি বলে আসতে পারিনি। 
বুকটা হুহু করে ওঠে। না যাই, কাছারির সামনে থেকে একটু ঘুরে আসি। পড়শীদের দেখা পেলে একটু হালকা লাগবে। হেঁটে বাইর বাড়িতে এলে দেখা গেলো সব সুনসান। মানুষজন আজকাল আর কাছারিতে বসে তামাক সেবন করে না। বরং চৌমাথার চা দোকানের চা তাদের আড্ডার মৌতাতকে বাড়িয়ে দেয়। ওখানে কল্পনার রাজা-উজির মারে। কিন্তু বাড়িতে একটা মশাও মারতে পারে না। অক্ষমতায় পেয়ে বসেছে গাঁয়ের মানুষকে।
কাউকে না পেয়ে শেখরের মাঝে বিষণ্নতা ঝেঁকে বসে। ফিরে আসা ভিটায় আজ আর কোনো প্রাণ নেই। পুরনো মানুষগুলো হাতড়ে ফেরে সে। খোঁজে সেই দুরন্ত কৈশোরের ছাপ। সময় কী খুব বেশি গড়িয়ে গেছে? শীতের দিনের মতো কী ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে এলো। জীবনের মধ্য গগনে এসে মন আকড়ে ধরতে চায় এ মাটিকে। ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা গাছটির গায়ে হাত বুলায় সে। বার বার তাকায় উঠানের দিকে। যদি কোনো শৈশব ছুটে আসে পাতার বাঁশি বাজাতে বাজাতে। যদি কোনো কিশোরী গামছায় বেঁধে খাবার বয়ে যায় মাঠের দিকে। কিন্তু কিছুই চোখে পড়ে না তার। চোখ দুটো অকারণেই ঝাপসা হয়ে আসে। চোখ কচলিয়ে দৃষ্টি মেলে সামনের সরিষা ফুলে। মন প্রশান্ত হয়। তবু মনে জেগে থাকে একরাশ শূন্যতা। দূরে ইছামতির বুকে ভেসে চলা ইঞ্জিন নৌকার ভটভট আওয়াজ ধকধক বাড়ি দেয় বুকে ।
সময় পাল্টায়। পাল্টে যায় প্রকৃতি। যা ছিল; তা একসময় অতীত হয়। যা আসে তা বর্তমান। মানুষ বর্তমানেই ব্যস্ত থাকে। ব্যস্ত রাখে নিজেকে। কিন্তু তুষ্ট থাকে না। কেনো থাকে না? এর উত্তর জানা নেই। জানে কেউ? এরই ফাঁক গলে নামে বিষণ্ন সন্ধ্যা।

পাঠকের মন্তব্য Login Registration