শীতের কাসুন্দি

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০১৯|১১:২৬:৪৫ মি.


সম্পাদক

 

হেমন্ত যায় শীত আসে। কখনও গুটি গুটি পায়ে। কখনও কাড়া নাকাড়া বাজিয়ে। এবারের শীত এলো বিজয় নিশান উড়িয়ে। বাঙালি জীবনে শীত আসে সামাজিক উৎসব হয়ে। গোলা ভরা ধানের আদরে বাড়িতে অতিথির কদর বাড়িয়ে। রাত জেগে বউ-ঝিরা ব্যস্ত হয় পিঠাপুলি তৈরিতে। চারপাশ মাতিয়ে রাখে পিঠার মিষ্টি গন্ধ। ক্লান্ত চাষির দল ঘুম ভেঙে গরম পিঠার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়। আমোদিত বুকে ভুলে যায় সারা মৌসুমের ক্লান্তি। গদগদ গলায় শংসা বচন ছাড়ে শীর্ণ গিন্নির থানে। বউ খুশি হয়ে উঠে আচানক মৌসুমী টানে। শীত পালায় গলার উষ্ণতায়। কিছুটা শরমিন্দাও হয় গেদার বাপের কথায়।

শীতের চেহারা কী পাল্টে গেছে খুব? তেরোশত নদীর দেশে ভাটির টানে নদীরও শুকায়, শুকায় হাওড়-বাওড়, বিল। জমির আল ধরে বোনের বাড়িতে নাবালক ভাইটি চলে পিঠার বোচকা, জোড়া শোল বা জোড়া হাঁস হাতে। শামুক খাওয়া তেলতেলে হাঁস। বুবুর বাড়ির ভেট বয়ে নুব্জ শরীরে চলে। তবুও ক্লান্তি নেই। কেননা বুবুর বাড়ির দাওয়ায় পা দিতেই জুটবে হাঁড়ির গরম ভাত, আর লাউ-চিংড়ির সালুন। তারপর বাড়ির সকলের খোঁজ-খবর নিতে নিতে রান্না হবে ঘরপালা মোরগের সালুন, সোনামুগের ডাল। ছোট ভাইটির পেট ভরে উঠবে বোনের আদরে। ভাইয়ের আবদার থাকবে বোনের নাইওর যাবার। একদিন পায়ে হাঁটা ক্রোশ পথ পেরিয়ে বা পালকিতে পৌঁছে যাবে নাইওরি তার বাপের বাড়ি। কোলাহলে ভরে উঠবে সারা আঙিনা। ফিরে যাবে কিশোরী বয়সের বনখোলায়।

শ্বাশত বাংলার গ্রামগুলোতে এখন লেগেছে শহুরে হাওয়া। দৃশ্যপট বদলে গেছে অনেক। গ্রামগুলো আর আগের মতো রাত জাগে না, ঢেঁকিতে পার দিয়ে। শোনা যায় না ঝি-বউদের গুনগুনিয়ে গান। এক প্যাচের শাড়িতে এখন আর শীত কাটে না। যদিও বাংলায় শীতের ধার নেই আগের মতো। যাত্রাগানে সারা গঞ্জ উজাগর থাকে না। নাচে না খেমটা নাচের বালক নর্তকী দল। কেমন যেনো বিবর্ণ ঝরাপাতার চেহারা নিয়েছে গ্রামগুলো। 

শীত পোহানোর আয়োজনও বেড়েছে অনেক। কিন্তু আগের সেই প্রাণ জাগানো সুরটি কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। শীত এলেই শৈত্যপ্রবাহ আসে। গরীবের কষ্ট বাড়ে। কাজ-কাম জুবুথবু হয়ে পড়ে সব। গণমাধ্যম-মানুষের কষ্ট দেখিয়ে শীত পালানোর গান গায়। কম্বল খোঁজে ত্রাণদাতার কাছে। তাই বলে কী শীতের সংস্কৃতিকে পালিয়ে যেতে দেবো? কেনো তাকে ধরে রাখবো না বোনের আদরে, ভাইয়ের চাদরে?
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration