কড়া নাড়ছে

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯|১২:০৬:১৫ মি.


সম্পাদক

দরজার কড়া নড়ছে। ‘কে কে? আমরা, দরজা খুলুন-কথা আছে। চলুন আমাদের সঙ্গে।’ সঙ্গে যাওয়া মেধাবী মানুষগুলো কথা শেষে আর ফেরেনি। ফিরতে দেয়নি তাদের। একটি স্বাধীনতা উন্মুখ জাতিকে মেধাশূন্য করার নকশা ছিল এটি। যা চালিয়েছিল পরাজিত শক্তি। চিন্তা; যাতে স্বাধীন জাতি আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এ-ও হয় নাকি? এ-ও কী সম্ভব, হয়েছে কোনোকালে? যে জাতি জন্মেই অদম্য-তার ক্ষেত্রে তো নয়-ই।

আজও কড়া নাড়ছে বিজয়। বিজয় এখন পঞ্চাশ বছরের প্রৌঢ়। চিন্তায় স্থিতি ঠাঁই নিয়েছে। এখন অনেক গুছিয়ে বলে। কী বলে? নিজের স্বপ্নের কথা, আগামীর কথা। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা-তার কথা। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য লড়েছে বাংলার দামাল। যে স্বপ্ন জাগিয়েছিল প্রতিটি মা-বোনের মনে স্বস্তির সুবাতাস। তাইতো তারাও ছিল প্রেরণাদাত্রী হয়ে, ছিল সম্ভ্রম হারিয়ে আধপোড়া ঘরের খুঁটি হয়ে। আসবেই সুদিন; সেই প্রত্যাশায়। আসবে স্বপ্নের স্বাধীনতা বাংলার আঙিনায়। ঘরের ছেলে ফিরবে ঘরে হাতে পতপত পতাকা উড়িয়ে।

অনেকে ফেরেনি। শহিদ হয়েছে রণাঙ্গনে। অনেকে ফিরেছে ঘরে। একবুক সবুজের স্বপ্ন নিয়ে। স্বাধীন স্বদেশ নানা হাহাকার আর বিধ্বস্ত অবয়ব নিয়ে ছুটে চলেছে সামনের দিকে। চলেছে দুঃসময় থেকে সুসময়ে পৌঁছে দিতে মানুষকে। ঐকান্তিকতার ঘাটতি ছিল না কোথাও। কিন্তু ছিল, ছিল পদে পদে দ্বিধা, ছিল অনভিজ্ঞ পদছাপ। তারপরও মনোরম ছিল দেশের মাটি, ছিল সোনার ফসল ভরা মাঠ। ছিল অদম্য বাঙালি পরাণ।

প্রৌঢ়ত্বের বিজয় এখন কিছুটা স্বস্তিতে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান তাকে আমোদিত করে। কিন্তু জনতার মুক্তি কী ঘটেছে? বৈষম্য কী কমেছে কিছু? তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রের ওপর এতটা অভিমানী হয়ে পড়ছে কেন? কেন পেতে চাইছে না মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা? ভাবতে হবে আমাদের, ভাবতে হবে এ জাতির কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে নিয়ে। বিশ্লেষণ করতে হবে, কখন একটি জাতির সূর্য সন্তানরা দূরে সরে যায়। দুঃখে নিরব হয়ে পড়ে। ভাবনার কাল সমাগত। বিজয়ের বাম অলিন্দের ব্যথাটা মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। তখন অস্থির সময় কাটে তার। পায়চারী করে অনবরত। ভাবনারা ডালাপালা মেলে; সঠিক পথে কী চলছে স্বদেশ?

কড়া নাড়ছে বিজয়। দরজায় ওপাশ থেকে খিল খুলে হাসিমুখে সামনে দাঁড়াবেন মা। বলবেন, ‘বাজান আইছস। কদ্দিন বাদে আইলি। প্রায় একবছর। মুখটা শুকনা লাগতেছে রে বাজান।’ মায়ের আদর থামে না পিঠের কুলায়।

পাঠকের মন্তব্য Login Registration