ধাবমান কাল

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০১৯|১৪:২৭:১৮ মি.


সম্পাদক

ধাবমান সময়, ছুটছে মানুষ। কেনো ছুটছে? তার উত্তর মেলে না। কবিগুরু তীর্থ যাত্রীদের কণ্ঠে প্রশ্ন জুগিয়ে ছিলেন-‘রাত কত হলো? উত্তর মেলে না।’ উত্তর মেলে না কারো কাছেই। আর সদুত্তর দেয়ার যোগ্যতা ও সাহস হারিয়েছে অনেকেই। মানুষ কী কখনও সদুত্তর পেতো কারো কাছে? সেটি কী অতীতকালের বিষয়। তা’হলে সোনালি অতীত কথাটি আসলেই সত্যি।

অগ্রহায়ণ গড়িয়ে যায়। ভোরের শিশির ঘন হয়ে কুয়াশায় ধরা দেয়। সকাল জেগে ওঠে কুয়াশার চাদর ছেড়ে। তা-ও প্রকৃতি শীতল হয়ে উঠছে না। যদিও গাঁয়ের সড়কের পাশে গাছি খেজুরের গাছে কলস বাঁধতে লেগে গেছে। তবুও উঠানের রোদে শরীর তাতানোর কাজে নিবিষ্ট হয়নি বৃদ্ধেরা। উত্তরের হাওয়া এখনও বইতে শুরু করেনি। তবুও সময় বয়ে যায় মানুষের স্রোতে।

শিশুরাও ছুটছে কাঁধে বয়সের চেয়ে ভারী বোঝা নিয়ে। জ্ঞানের বোঝা। আক্ষরিক অর্থে বই-খাতার বোঝা। আসলেই এগুলো বোঝা হয়ে পড়েছে তাদের কাছে। কেননা এ বোঝার জ্ঞান এখন আর অর্থনৈতিক নয়। এ শিক্ষা কর্মমুখী হয়ে উঠতে ক্রমন্বয়ে ব্যর্থ হয়ে পড়ছে। অনেকটা পিছিয়ে পড়া শহুরে শীতের মতো। তবুও শিশুরা সুর করে পড়ছে ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল, কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।’

প্রকৃতির নিয়মে কুসুম একসময় ফোটে। চারিদিকে সুবাস ও সৌন্দর্য ছড়াবার তরে। আজকাল সে সুবাস কী নাকে লাগে পথচারীর; লাগে কী প্রতিবেশীর? লাগে না। সৌরভ হারিয়েছে হাইব্রিড। প্রসার বাড়ছে। বাড়ছে প্রবৃদ্ধিও। শুধু হারাচ্ছে সুকুমার নান্দনিকতা। সময় কোথায় চেয়ে দেখবার? সময় কোথায় নন্দন মাপবার? ধাবমান সময়ের গাড়িতে উঠে বসেছে মানুষ। এক্সপ্রেস ট্রেনের মতোই ছুটছে জংশন থেকে জংশনে। এখানে ক্ষুদ্র স্টেশন—ভাতশালা, পথপাশের অনামী ফুলের মতোই অনাদরে পড়ে থাকছে। সৌন্দর্যের পূজারী মানুষ কী বিদায় নিয়েছে চরাচর থেকে। এ কথাও কী বিশ্বাস করতে হবে আমাদের?

পাঠকের মন্তব্য Login Registration