পরিবেশ দোষে

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০১৯|১৪:২৮:৫৯ মি.


সম্পাদক

মাটি নিজে পোড়ে না। মানুষ পোড়ায় তাকে নানা আকার দিতে। কখনও ইট, কখনও ঘরের হাঁড়ি-শানকি, কখনও বা খেলার পুতুল গড়ে মানুষ। মানুষ চাইলেই যা খুশি তৈরি করতে পারে। পারে মনের সুখে লাল ইটের নগর গড়ে তুলতে। তুলছেও ক্রমাগত। নগর ছড়িয়ে পড়েছে কৃষকের চাষের মাঠে। শুধু একটা সড়ক পথ জমিকে এফোঁড় ওফোঁড় করেছে তো কী সেরেছে। হামলে পড়ছে আবাসনের প্রতীক্ষায় থাকা কাঙালের দল। যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই—অন্নের ঠাঁই বিনাশে। পোড়ামাটির স্তূপ বেড়েই চলেছে।

মানুষ আজকাল নাকি বিষণ্নতায় ভুগছে। ভুগছে শ্বাসের কষ্টে। কার্বন বাড়ছে কমছে অক্সিজেন। মানুষ দুষছে পরিবেশকে। পরিবেশ মানুষই নির্মাণ করে। তার শরীর ও মানসকে বাঁচাবার জন্য। কিন্তু মানুষ কী নিজেকে বাঁচাতে পারছে? মনে হয় পারছে না। কেননা বিষয়টি সামষ্টিক, সামজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবনার ফসল। রাষ্ট্র কী ভাবছে পুরনো নগরকে না ভুগিয়ে আর একটি নতুন নগর গড়তে। যার পথে পথে থাকবে সবুজের আদিগন্ত শীতল ছায়া, চারপাশে বাজবে পাখির কুজন; মানুষ দৃষ্টি শানিয়ে নেবে নানা বর্ণের ফুলের ছটায়।

নগরের নাগরিক স্বস্তিতে শ্বাস নেবে। কিন্তু মানসিক স্বস্তিটি পাবে কোথায়? যেখানে সমাজের শ্বাসমূলটি মাটির ওপরে উঠে আসতে পারছে না। মানুষ ছুটছে বেঁচে থাকার প্রয়াসে। শুধু বেঁচে থাকাই কী জীবন? মরণের মাঝে যার লয়! এর মাঝে কী মানুষ হাসি-কান্নার দোলায় দুলবে না? দেখবে না আগামী সকালে কোন মানবিক সুর। জাগবে না আড়মোড়া ভেঙে প্রতিবেশী মোরগের ডাকে। সে ব্যবস্থাটি কোথায়? মানুষের চিন্তায় তার ঠাঁই নেই।

মানুষের পরিমিতিবোধ মরে গেছে। যে বলে সে অনেক বলে, যে বলে না সে শোনেও না। শুধু বিষণœ হয়ে কাল ক্ষেপন করে। এভাবে একটি সমাজের জানালায় কখনও দখিনা বাতাস খেলে না। খেলে না মুগ্ধতার সকাল-বিকেল। এখানে নিয়ম করে সকাল ও বিকেল হয়। কখনই মানুষের আঙিনায় সকাল আসে না, বিকেলও আসে না। আসে না কোনো আগামীর স্বপ্ন নিয়ে। মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে হবে। দেখাতে হবে যোজন-যোজন দূরের জলাশয়। আর সেজন্যই তৈরি করতে হবে পরিবেশ। ইট পুড়িয়ে নয়, মাটিকে জুড়িয়ে। কেননা নগর পুড়লে দেবালয়েও স্বস্তিতে থাকে না।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration