নতুনের ঘ্রাণ

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০১৯|১৭:৩৬:০৩ মি.


সম্পাদকীয়

বর্ষার বিলে টান ধরেছে। পানি নেমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ধান খেতের ফাঁকে ফাঁকে কৈয়া জাল পেতে রেখেছে চাষি। কয়েকদিন যাবৎ কুড়ির উপরে হলদে বুক কৈ ধরা পড়েছে জালে। চাষি বৌয়ের মুখে তাই নির্মল হাসি। বিরান মাছের সালুন আর ছেঁচি শাক, আয়োজন ভালই।
নতুন ধানও উঠে গেছে। নতুন চালের ভাত মাটির হাঁড়িতে বলকাচ্ছে। নতুন চালের ঘ্রাণে ম ম করছে সারা রসুঁই ঘর। খন্দের প্রথম চালের ভাত বাড়ির মুরুব্বি কালু চাচাকে পাঠাতে হবে। তারই আয়োজন চলছে ঘরে। গাঁয়ের সমাজে এটাই নিয়ম। বাড়ির মুরুব্বিকে দিয়ে নতুন ধানের নতুন চালের ভাত মুখে তোলে চাষি পরিবার। এ ঐতিহ্য চলছে হাজার বছর ধরে। নতুন ধানের চালের ভাত খেয়ে মুরুব্বিও দোয়া করে সমৃদ্ধির।
বাঙালি সমাজের মূল্যবোধের ঘাটতি একতিলও ঘটেছে কী? যদিও শহরে আসা মানুষগুলো বলে চলে— গ্রাম আর আগের মতো নেই। গ্রামের প্রান্তিক মানুষ; যাদের জীবনে শিক্ষা ও শহর অতটা ঢুকে পড়েনি। যাদের সম্পদ বলতে কয়েক শতক জমি। যাদের শ্রম এখনও মাটির সাথে কথা কয়। ফলায় সোনার ফসল। তারা এখনও চিরায়ত বাংলার সামাজিক ঐতিহ্যকে লালন করছে। 
পিঠা পুলির সময় সমাগত। শীত এলেই রাতের কুয়াশা চিড়ে চাষি বৌয়ের নাড়ার চুলার চারপাশ ঘিরে ছড়িয়ে থাকে গুড়, নারকেল আর চালের গুড়ির উপাচার। হাত চলতে থাকে নিপুণ কারিগরের মতো। পরিজনের মুখে ওঠে গরম গরম পিঠা। বাংলার নবান্ন মনে করিয়ে দেয়—একদিন বাঙালি ছিলাম রে...।
আমরা বাঙালিরা আছি এবং থাকবো। বাংলার নতুন ধানের ঘ্রাণে ভরে উঠুক প্রতিটি গাঁয়ের আঙিনা। নবীন ছানারা লাফাক উঠানময় পিঠা হাতে।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration