নিসর্গের নান্দনিক উপলব্ধি

প্রতিনিধি | শিল্পকলা

শনিবার ১২ অক্টোবর ২০১৯|১৬:০৩:০০ মি.


মুন রহমান

বিমূর্ত চিত্রকলা হলো ব্যক্তিক চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে গিয়ে শিল্পীর স্বভাবজাত সৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক সৃষ্টির মিথস্ক্রিয়া। এই মিথস্ক্রিয়ার সর্বোত্তম ব্যবহার যিনি করতে পারেন, তাঁকেই বলা যায় বিমূর্ত শিল্পধারার জাদুকর। এমন এক জাদুকরের জাদু যদি দেখতে চান, তবে আপনাকে যেতে হবে ঢাকার বেঙ্গল শিল্পালয়ে, শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দীনের একক চিত্র প্রদর্শনী ‘দ্য ওয়ার্ক অব ক্রিয়েশন’-এ।

ক্যানভাসে রং-জল বা তেলের খেলায় আপনা হতে সৃষ্ট ফর্ম, রেখা ও টেক্সচারের অপূর্ব দ্বিমাত্রিক বিন্যাস কী বলতে চায় দর্শকদের? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে কাজী গিয়াসের কিছু চিত্রকর্ম নিয়ে বিশদ ভাবনার সুযোগ রয়েছে। ‘স্টোরি-১’ ও ‘স্টোরি-২’—এই দুই ছবির সাদা ক্যানভাসে অনেক রং চড়িয়েছেন শিল্পী, যেখানে রংগুলো নিজেদের গল্প উন্মোচন করে চলেছে নিজেরাই। পলকা ঢেউয়ে স্রোতস্বিনী নদীর কোলজুড়ে যেমন নকশা কাটে প্রকৃতি, তেমন টেক্সচার যখন ‘স্টোরি’ সিরিজে দেখা যায়, তখন আমাদের মনে হয়তো নদীমাতৃক বাংলাদেশ ফিরে আছে।

 আবার ‘মিউজিক অব দ্য ফুল মুন’ ছবিতে প্রগাঢ় অন্ধকারে রুপালি জোছনার আলোর স্পন্দন পাওয়া যায় যেন। গিয়াসের শিল্পকর্মের উপাদান বিমূর্ত ধারার হলেও তা কিন্তু প্রকৃতিরই অনির্বচনীয় উপাদান। স্বাভাবিকতাবাদ এখানে অনুপস্থিত নয়। বিষয় নির্ধারণ এবং তার উপস্থাপনায় গিয়াসের পরিমিত বোধ মুগ্ধ করে আমাদের।

অন্যদিকে ‘সাউন্ড অব রেইন’ সিরিজে কাগজের দেয়ালে জলরঙের বৃষ্টি এক ঐন্দ্রজালিক আবহ তৈরি করে দর্শকমনে। শিল্পীর সত্তরের দশকের দুটি জলরঙের ছবি ‘জিপসি বোট’ ও ‘ফিশারম্যানস হাট’ প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ হয়ে থাকবে।

প্রকৃতি ও শিল্পের আত্মিক মেলবন্ধনের স্বরূপ উন্মোচনে সিদ্ধহস্ত কাজী গিয়াসউদ্দীন। তাঁর ছবির ভাবগতিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই, বরং নতুন কিছু যদি বলতে হয় তবে বলতে হবে, এই প্রদর্শনীর প্রদর্শনশালা বেঙ্গল শিল্পালয় নিয়ে। ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করার পর ২০১৬ সালে সংস্কারের জন্য কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বেঙ্গল শিল্পালয়ের গ্যালারি। নাতিদীর্ঘ বিরতি শেষে ৫ এপ্রিল গিয়াসউদ্দীনের বিভিন্ন সময়ের চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর মাধ্যমে আবার নবযাত্রা শুরু করেছে বেঙ্গল শিল্পালয়। তরু-লতায় পল্লবিত প্রকৃতির এত ঘনিষ্ঠ এমন নান্দনিক নকশার ভবনটি প্রবেশমুখেই দর্শকের নজর কাড়ে। দুই তলাবিশিষ্ট এই ভবনে রয়েছে দুটি প্রদর্শনশালা। এগুলোর নামকরণ হয়েছে পটুয়া কামরুল হাসান এবং শিল্প সংগঠক সুবীর চৌধুরীর নামে। দুটি প্রদর্শনশালাতেই আলোচ্য প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ১৮ মে পর্যন্ত। 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration