সত্য বল

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০|১৯:৪৮:২০ মি.


সম্পাদক

সদা সত্য বলবে। মা শেখান তার সন্তানকে। সত্য বলার শিক্ষা শিশু পায় তার পরিবার থেকে। পরিবারই সত্যের সূতিকাগার। কেননা পরিবার একটি সামাজিক একক। যা গড়ে ওঠে বিশ্বাস নিয়ে। আর পথ চলে আস্থা নিয়ে। পরিবারের মা হচ্ছেন বিশ্বাস, বাবা আস্থার প্রতীক। শিশুর মা-ই প্রথম শিক্ষক। ভাষা শিক্ষা থেকেই মানুষ। চারপাশের সত্যকে জেনে হয় মানবিক মানুষ। তারপর পরিণত হয় সামাজিক মানুষে। হয় রাষ্ট্রের সম্পদ। কজনই বা রাষ্ট্রের সম্পদ হতে পারে। অনেকে আবার রাষ্ট্রের দায় হয়ে পড়ে। 

কে যে সত্য বলে বোঝা মুশকিল। গুরু বলেছেন, ‘মানুষের উপর বিশ্বাস  হারানো পাপ’। কিন্তু যখন ঠকে যায় মানুষ, যখন ঠেকে মানুষ মানুষের কাছে, তখনও কী বিশ্বাস হারাবে না? এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। মানুষ বিশ্বাস হারায় আস্থাহীনতায়। আস্থার জায়গা পরিবারের বাবা। বাবা শত প্রতিকূলতায় প্রতিরোধী দেয়াল। পৃথিবীর কোনো বাবাই খারাপ বাবা নয়। আসলে কী তাই? যে ঠকায় সে এক বাবার সন্তান। যে ঠকে সেও আরেক বাবার সন্তান। ঠকবাজ কী তার পরিবার থেকে ঠকবাজী শেখে? হয়তো শেখে, হয়তো বা শেখে পরিবেশ থেকে।

বাবার আশ্বাস যখন ক্রমান্বয়ে মিথ্যায় পর্যবসিত হয় তখনি সন্তান শেখে ছলনা, শেখে ঠকানোর কৌশল। যেমনটা সে ঠকেছে বাবাতে আস্থা রেখে। একসময় এই শিক্ষাটিই তার চর্চায় পরিণত হয়। যে বাবার কাছে ঠকানো শিখেছে, সে জানে মানুষকে ঠকানো যায়। তখন সে ব্যক্তিজীবনে অনায়াস মিথ্যাবাদীতে পরিণত হয়। হয়ে যায় স্বভাবজাত ঠকবাজ। যা কখনই মানব সমাজে কাম্য নয়। তবুও নৈতিক শিক্ষার ঘাটতি ঠকবাজ তৈরি করে। এর জন্য দায়ী র্শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সংগতি যা তৈরি করে রাষ্ট্র।

দান মানুষের হার্দিক বিষয়। কিন্তু এক্ষেত্রেও হাত পাতা সাহায্য প্রত্যাশী মানুষটিকে দাতা যাচাই করে। ঝালাতে চায় সত্য-মিথ্যার চালুনিতে। কেননা দান অপাত্রে হচ্ছে না তো—বিষয়টি নিশ্চিত হতে চায়। যদিও এখানে পাপ-পুণ্যের লেনদেন জড়িত। জড়িত দাতার বদান্যতা ও উদারতা। ধরে নিই, গ্রহীতা সত্যই বিপদগ্রস্তজন। আজকাল দানধ্যানেও মিথ্যা বেড়েছে। দান করার পর দাতার মনে হয় তিনি ঠকেছেন। আবার অনেকেই দাতা হাতেমতাই হন মিথ্যার বেসাতি দিয়ে। যে সম্পদ অবৈধভাবে অর্জিত। তারা কী পুণ্যের আশা করেন? না, আবর্জনার স্তূপ অন্যের ঘাড়ে দিয়ে জিরাতে চান—বোঝা মুশকিল।

আসলে মানুষ এখন সত্য-মিথ্যার দোলাচলে। সত্য বিপদজনক, সত্য ভয়ঙ্কর। এমন পরিবেশে মা কী এখনও সন্তানকে বিশ্বাস বিতরণ করছেন? বাবা কী আস্থার দেয়াল নির্মাণ করছেন—সন্দেহ। সন্দেহ দূর করতে হবে। এজন্য সমাজ চিন্তক বা সমাজবিজ্ঞানীরা ভাববেন। সময় এসেছে ভাববার। পরামর্শ দেবেন, সত্যের সন্ধান দেবেন সত্যবাদীদের। আস্থার জায়গা তৈরি করবেন। তাহলেই তৈরি হবে বিশ্বাস ও আস্থাশীল মানুষ। তৈরি হবে নির্ভীক সমাজ। যেখানে ঠকানো বা ঠকে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। নৈতিকতার ঘাটতি সমর্থন জোগাবে না ঠকবাজকে। এখানে তৈরি করতে হবে সত্যবাদীতার সংস্কৃতি। আর তা তৈরি করবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। তাহলে আস্থা হারাবে না মানুষ জীবনের প্রতি। বিষণ্নতায় ভুগবে না বাঙালি। সত্য বলেই, 
‘সামনে যাব 
আরো সামনে 
সূর্যোদয়ে যাব’।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration