উদরের কদরে

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারী ২০২০|১৯:৩৬:৫৪ মি.


সম্পাদক

উদর সর্বস্ব বাঙালি। কথাটি কোনো এক দার্শনিকের। বাংলার দর্শন নিয়ে খুব বেশি অতীত ইতিহাস আমার জানা নেই। তবে খনা একজন বাঙালি দার্শনিক। যে বাঙালির আচার-অনুষ্ঠান, অভিজ্ঞান নিয়ে ছড়া কেটেছেন। যাঁর যথার্থতা আজও খুঁজে পাই। বিশেষত প্রকৃতির আচরণ, কৃষকের চাষবাস—ঠিক ঠিক ফলে যায়। প্রকৃতি খুব বেশি পাল্টায়নি এখনও। শীতের পরে এখনও বসন্ত আসে। চাষের মানুষগুলো আজও চর্চা করে বিদূষী খনাকে। 
‘কলা রুয়ে কেটো না পাত, 
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’।

‘বাঙালির সন্তান যেনো থাকে দুধে-ভাতে’— এ আশীর্বাদও অতীতে উচ্চারিত হয়েছে। বাঙালি এখন দুধে-ভাতে না থাকলেও পানি মিশ্রিত দুধে আছে কি না জানি না। এটুকু জানি, বাঙালি এখন আর কবজি ডুবিয়ে বসে থাকে না থালায়। সে আলিশান থালাও নেই এখন। সবাই পেরেশান উদরের জন্য। নিদারুণ ব্যস্ততা দিনান্তে। যাদের ব্যস্ততার জোগাড় হয়নি; তারা চিন্তিত। প্রার্থনা ঈশ্বর আর ক্ষমতার প্রতিভূদের কাছে। কখন দৃষ্টি সদয় হবে প্রার্থীতের প্রতি। কখন মিলবে কাজ। জুটবে উদরের শান্তি। কিন্তু মেলে না।

আজ আর কেউ রেঙ্গুন যায় না। যায় না আসাম। যায় মধ্যপ্রাচ্যে বা ইউরোপে। অনুপযুক্ততা নিয়েই ভীড়ে যায় মানব দালালের মুনাফায়। ওখানেও যে উদরের দায়। কারো ডাল-ভাতের, কারো রেজালা-বিরিয়ানীর, কারো হট-ডগ বার্গারের। এপথে, ওপথে, বিপথে যাচ্ছে সবাই। যাচ্ছে নারীরাও। পোশাক বালিকা হয়ে এখন আর দিন কাটে না। বাজারে যে উচ্চমূল্য সব। প্রান্ত টেনেও উদর খালি পড়ে থাকে।

তবুও মানুষ সংসার বিবাগী হয় না আজকাল। হয় না বনে-বাদাড়ের সেরা ডাকাত। কেননা সমাজে এখন শতছিদ্র। যেকোনো ছিদ্র পথে ঢুকে পড়তে পারলেই হয়। ব্যস, কেল্লা ফতে। দু’মাসের জায়গায় দুবছরেই দুর্গে নিশান উড়াবার সময় হয়ে যাবে। কমপক্ষে দিবসে দিবসে স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা উড়বে নিজের দালানে। এতে সাধারণের পকেট খালি হবে। মুখথুবড়ে পড়বে প্রতিষ্ঠান। উজাড় হবে ব্যাংক। হাওয়া হবে শেয়ার বাজার। পথে বসবে পুঁজির মালিকরা। তবুও থামবে না উদরবাজের দল। ছলেবলে করবে উদরপূর্তি। আর বোগল বাজিয়ে করবে ফূর্তি। কী আছে জীবনে! 

সবার জীবনে একটাই স্বার্থ ‘কামাতেই হবে অর্থ’। সে যে করেই হোক। তাই আজকাল সংসার বিবাগী বাউল মেলে না পথে-প্রান্তরে। মেলে না লেটো আর যাত্রা দলের উষ্কখুষ্ক নট-নটীর দল। মেলে না সৃজনের নেশায় মগ্ন পাণ্ডুর মুখ। সবাই এখন খুবই সতর্ক, ধূর্ত, শৃগালের স্বজন। সর্বত্রই উদর ঘিরেছে মানুষের কদর। এখানে মায়া-মমতা, মনুষ্যত্ব, সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, ধর্ম দূর-অস্ত। সবই রসাতলে। শুধু গুরুভজার দল খিচুড়ির পরমান্নে তুষ্ট হতে কেবল ছুটছে। কোথায় নীতি, কোথায় গীতি, কোথায় শিক্ষা, কোথায় দীক্ষা? সবই গিলেছে বাঙালি উদরে, সবই ডুবেছে অর্থের কদরে।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration