গুণী তিন চিত্রশিল্পীকে শিল্পকলায় স্মরণ

প্রতিনিধি | সংবাদ

বুধবার ১০ জুলাই ২০১৯|১৬:৪৮:১৫ মি.



সৃজনবাংলা ডেস্ক : দেশের চিত্রকলায় প্রাতঃস্মরণীয় নাম পটুয়া কামরুল হাসান, এসএম সুলতান ও কাইয়ূম চৌধুরী। এ তিন গুণী শিল্পীকে সোমবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করে শিল্পকলা একাডেমি।

একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে পটুয়া কামরুল হাসানকে নিয়ে প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, এসএম সুলতানকে নিয়ে চিত্র সমালোচক মোস্তফা জামান এবং কাইয়ূম চৌধুরীকে নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চিত্র সমালোচক শাওন আকন্দ।

আলোচনায় অংশ নেন শিল্পী হাশেম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন এবং চিত্র সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ।

একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম পপলু।

‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ : গুরুসদয় দত্ত-কামরুল হাসান পরম্পরা’ শীর্ষক প্রবন্ধে মফিদুল হক বলেন, পাশ্চাত্য রীতির শিল্পচর্চা ছাপিয়ে গুরুসদয় দত্ত মনোনিবেশ করেছিলেন লোকায়ত শিল্পরূপের দিকে।

এ একই লক্ষ্যে কামরুল হাসানকে ধাবিত করেছিলেন তিনি। গুরুসদয় দত্ত এবং ব্রতচারী শিল্পদর্শন ও কৃত্যের সঙ্গে সম্পৃক্তি কামরুল হাসানের শিল্পদৃষ্টি গড়তে প্রধান ভূমিকা পালন করে।

লোকশিল্পের ঐতিহ্য অনুসন্ধান, তা ধারণ এবং এর পুনঃস্থাপন কামরুল হাসানের জন্য শুধু শিল্প সাধনার বিষয় ছিল না। তিনি এর প্রায়োগিক তাৎপর্য প্রদানে সদা সচেষ্ট ছিলেন।

‘এসএম সুলতানের সমালোচনা ও সৃষ্টিশীলতার পুনঃপাঠ’ শীর্ষক প্রবন্ধে মোস্তফা জামান বলেন, এসএম সুলতানের কাজ শুধু সিম্বল বা ফর্ম হিসেবে চোখের সামনে হাজির হয় না।

তার যে সব কাজ শুধু গ্রামীণ দৃশ্য নয়, তাতে কল্পদৃষ্টি দৃশ্যমান, যেমন ‘আদিম বৃক্ষরোপণ’ অথবা ‘যাত্রা’, এসব চিত্রকল্পের পেছনের আখ্যানের সূত্র হিসেবে দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।

‘লোকশিল্প, আধুনিকতাবাদ এবং শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী’ শীর্ষক প্রবন্ধে শাওন আকন্দ বলেন, বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলার ইতিহাসে কাইয়ূম চৌধুরীর স্থান শেষ পর্যন্ত বিমূর্তধারার চিত্রকর হিসেবে নয়।

বরং জয়নুল-কামরুলের ধারাবাহিকতায় তার চিত্রকলাতেও বাংলার লোক-ঐতিহ্য ও দেশজ সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং মাতৃভূমিররূপ ও স্বদেশ ভাবনার প্রতিফলন দেখা গেছে।

ষাটের দশকে তৎকালীন পশ্চিমা আধুনিকতার অভিঘাতে তিনি বিমূর্ত রীতির শিল্পী রচনা করলেও, তিনি কখনই দেশের পরিচয় মুছে ফেলতে চাননি। বরং লোকজ ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে নিজস্ব শৈলী নির্মাণের চেষ্টা করেছেন।

ক্রমশ নকশাধর্মিতাকে অতিক্রম করে কাইয়ূম চৌধুরী পৌঁছে গেছেন এমন এক স্তরে যেখানে বিভিন্ন অলঙ্করণের আড়ালে তার অনুভব ও অনুভূতি প্রকাশ করতে হয়নি।

বরং তিনি ক্যানভাসে রঙ বিভাজন আর জোরালো তুলির টানে তার আরাধ্য রূপকে ধরতে চেয়েছিলেন। বাংলার প্রকৃতি আর মানুষ- তার ক্যানভাসে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

যতদিন যাবে, বাংলাদেশ নামক এ ভূখণ্ডের মানুষ, প্রকৃতি এবং আবহমান গ্রামীণ সংস্কৃতির চিত্ররূপ হিসেবে কাইয়ূম চৌধুরীর শিল্পকর্মের প্রাসঙ্গিকতা ও তাৎপর্য ক্রমশ নতুন নতুন মাত্রায় আবিষ্কৃত ও উদদ্ঘাটিত হতে থাকবে। সেজন্য আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে।

পাঠকের মন্তব্য Login Registration