চারুকেশীর ভালোবাসা রাঙিয়ে গেল মন

প্রতিনিধি | সাহিত্য

শনিবার ৬ অক্টোবর ২০১৮|১১:৫১:১৩ মি.



সৃজনবাংলা ডেস্ক: ভালোবাসার দেবতা মনমদনের পঞ্চবাণ থেকে রাগের নাম চারুকেশী। সে রাগেই সরোদের নিবেদন দিয়ে আয়োজন শুরু করলেন ভারতীয় শিল্পী অর্ণব ভট্টাচার্য। এরপর তবলায় তাল আনলেন নিলীমেশ চক্রবর্তী। তবলা আর সারোদের যুগল বন্দিতে বিন্দুধারীর সব দর্শক একে একে উপভোগ করলেন রাগ মারুবেহাগ, রাগেশ্রী, যোগ এবং গোরক কল্যাণ।

গত রোববার  সামাজিক উন্নয়নমূলক সংস্থা রিথিংকের আয়োজনে নিজস্ব কার্যালয় রাজধানীর গ্রিন রোডের বিন্দুধারীতে অনুষ্ঠিত শাস্ত্রীয় সংগীতের এ আয়োজন ‘সন্ধ্যা সঙ্গীত’। 

এতে বাদ্যযন্ত্রের পরিবেশনা নিয়ে হাজির হন দু'জন ভারতীয় শিল্পী। আয়োজনে সরোদ পরিবেশন করেন অর্ণব ভট্টাচার্য এবং তলবায় পরিবেশন করেন নিলীমেশ চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে দর্শক হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয় হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানুষগুলোকে।

রাজধানীতে হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন এবং সদাচারণ প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে সমাজ সেবা অধিদফতর এবং রিথিংক যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে একজন হিজড়া যে কাজে পারদর্শী বা আগ্রহী, তাকে সে কাজ শেখানো এবং তাদের সদাচারণ প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য রিথিংক আয়োজন করে এ অনুষ্ঠানের, যেনো হিজড়া জনগোষ্ঠী কিছুটা হলেও এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুদ্ধ সংগীত সম্পর্কে জানতে পারে।

আয়োজন সম্পর্কে শিল্পীদের নিবেদনের মাঝে মাঝে কথা বলেন হিজড়া জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষ। তারা বলেন, এ আয়োজন আমাদের সত্যিকার ভাবেই অনুপ্রাণিত করেছে। অন্য জায়গায় কোনো আয়োজনে গেলে যেমনটা সবাই সরে যায় বা আমাদের তাড়িয়ে দেয়, সেখানে শুধুমাত্র আমাদের জন্য এ আয়োজন সত্যিই অনেক ভালোলাগার। আর এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা শুদ্ধ সংগীতের সঙ্গেও বেশ ভালোভাবে পরিচিত হতে পারলাম।

সমাজের আর দশটা মানুষের থেকে একটু ভিন্ন হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো। সাধারণ মানুষগুলো যেমন তাদের আড়চোখে দেখে, তেমনি মেলেনা সম্মানও। সামাজিক কোনো আচার-অনুষ্ঠানেও সবাই তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় খুব সহজেই। তবে সেই সম্মানহীন মানুষগুলোকেই একটু ভালোবেসে সবকিছুর সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু করেছে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা রিথিংক। তারই অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হলো হিজড়াদের জন্য শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুষ্ঠান ‘সন্ধ্যা সঙ্গীত’।

এমন একটি আয়োজনে নিজেদের নিবেদন করতে পেরে রিথিংকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শিল্পীরাও। তারা বলেন, আমরা পৃথিবীর অনেক দেশে পরিবেশন করেছি। কিন্তু এমন আয়োজন কোথাও পায়নি। সমাজের এই শ্রেণীটা সবসময় দূর থেকেই আমাদের দেখেছে এবং আমরাও সেভাবে কখনো তাদের কাছে আসতে পারিনি। অথচ এই সংগীতে তাদের আগ্রহ। এতো কাছে থেকে আজ তাদের জন্য পরিবেশন করতে পারা, তারা সামনে বসে শুনছে, সত্যি অনেক ভালো লাগছে। ভালো লাগার সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটা অনুভূতির মতো এটা।

সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রিথিংকের পরিচালক লুলু-আল-মারজান। তিনি বলেন, নিবেদনটা খুব প্রয়োজন। সেটা হোক সংগীতে কিংবা মানুষে, গাছে অথবা যে কোনো প্রাণে, প্রেমে, বেঁচে থাকায় কিংবা মরণে।

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে প্রথাগত ও আধুনিক উভয় ধারারই সংমিশ্রণ পাওয়া যায় অর্ণব ভট্টাচার্যের পরিবেশনায়। বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন তিনি। দেশে-বিদেশের বহু মঞ্চে সরোদ পরিবেশনের খ্যাতি অর্জন করেছেন অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শনের নিয়মিত এ শিল্পী।

অপরদিকে, সংগীত পরিবারে জন্ম নেওয়া নিলীমেশ চক্রবর্তী বহু গুণী তবলাবাদকের কাছে প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন। সর্বভারতীয় সংগীত পরিষদ, ডোভারলেন মিউজিক কম্পিটিশনের মতো প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অধিকারের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

পাঠকের মন্তব্য Login Registration