যে দিনটা অধিনায়কের

প্রতিনিধি | আরো

শুক্রবার ৫ অক্টোবর ২০১৮|১৭:০০:২২ মি.



ফেরদৌস রহমান: আজ মাশরাফি বিন মুর্তজার জন্মদিন। কেবল তিনিই নন, আজ জন্মদিন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকেরও। আরেক বিখ্যাত অধিনায়ক পাকিস্তানের হালের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও জন্মেছিলেন এ দিনেই। দিনটা নিশ্চিত করেই অধিনায়কদের।

বাংলাদেশের ক্রিকেট বদলে গেল কবে?

২০০১ সালের ৮ নভেম্বর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ মাত্র ১০৭ রানে অলআউট হয়েছিল। তবু দিন শেষে বাংলাদেশের সমর্থকদের মুখে হাসি। ২০ রানে জিম্বাবুয়ের ২ উইকেট পড়েছিল। না, সে কারণে নয়। উইকেট দুটো নিয়েছিলেন মনজুরুল ইসলাম, কিন্তু হাসি ফোটানোর কাজটা করেছিলেন এক ১৮ বছরের ছেলে। গতির ঝড় তুলছিলেন, জাগাচ্ছিলেন শিহরণ। জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের বাধ্য করছিলেন ব্যাকফুটে যেতে। এক সাবেক অধিনায়ক মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশের পেসার এসব ব্যাটসম্যানের ব্যাকফুটে পাঠাচ্ছে ভাবা যায়? অভিষেকের দিন থেকেই তো অভাবনীয় সব কীর্তি করছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

মাশরাফি বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক ভালোবাসার নাম, এক আক্ষেপের নাম। চোট নামক এক ভয়ংকর শত্রু চিরদিনের সঙ্গী না হয়ে উঠলে মাশরাফি আজ কোথায় থাকতেন কিংবা বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ কোন উচ্চতায় থাকত, সেটা নিয়ে ক্রীড়া সাহিত্যের জন্ম দেওয়া যায়। বারবার চোট থেকে ফিরে আসার পরেই দলের বোলিং আক্রমণের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে দল ও তাঁর অনভিজ্ঞতা কিংবা অজ্ঞতার দায় মিটিয়ে আবার পড়েছেন চোটে।

এর মাঝেও ওয়ানডেতে দেশের সেরা বোলিং রেকর্ড গড়ে নিয়েছেন মাশরাফি। বাংলাদেশের ইতিহাসে যখন যে কোনো জয়ই ঐতিহাসিক ট্যাগ পেত, তার সবগুলোতেই রেখেছেন প্রত্যক্ষ অবদান। ২০০৫ সালের অস্ট্রেলিয়া বধ, এর আগে ভারতকে শততম ওয়ানডেতে হারানো, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বিখ্যাত সেই জয়, প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কা কিংবা নিউজিল্যান্ডকে হারানো—সব ম্যাচেই ছিলেন মাশরাফি। ব্যাট আর বল, দুটিতেই দলকে ভরসা দিয়েছেন।

বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক শব্দটা থেকে রক্ষা করার কাজটাও করেছেন মাশরাফি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে এখন শ্রদ্ধা করার মতো দল, এ দলকে যে সবাই এখন সমীহ করে, এই লক্ষ্যটা অর্জন হয়েছে মাশরাফির কল্যাণেই। টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পর ২০১৪ সালেই সবচেয়ে বেশি হতাশা উপহার পেয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ভারতের প্রায় বি দলের কাছে ভরাডুবি আর ওয়েস্ট ইন্ডিজে রীতিমতো নাকানিচুবানি খেয়ে বাংলাদেশ তখন অকূল পাথারে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে মাশরাফির কাঁধে দলের ভার তুলে দেওয়া হলো। ফাটকা নাকি অন্য কিছু?

জিম্বাবুয়েকে দুই ফরম্যাটে ধবল ধোলাই দিয়ে বিশ্বকাপে গেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সমৃদ্ধ গ্রুপ থেকেই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে বিরুদ্ধ উইকেট ও কন্ডিশনে খেলে। এরপর থেকে একের পর এক সিরিজ জয়, সে পথেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালও খেলা হয়ে গেল। টানা দুই এশিয়া কাপের ফাইনাল, সেটাও দেখা হয়ে গেল মাশরাফির সুবাদে। এর সবই সম্ভব হয়েছে এই মাশরাফির অধিনায়কত্বে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বলেই তিনি এখন ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক, ক্যাপ্টেন অব এশিয়া। আজ তাঁর জন্মদিন। শুভ জন্মদিন অধিনায়ক। 

অধিনায়কের জন্মদিন প্রসঙ্গেই আরেকজনের কথা চলে আসছে। পাকিস্তান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম নিঃসন্দেহে ইমরান খান। একটি দেশকে পেস বোলিং পাগল বানিয়ে দিয়েছেন শুধু ইমরানই। তাঁর দেখানো পথে হেঁটেই একের পর এক ভয়ংকর গতির সব পেসার উঠে এসেছে পাকিস্তানে। খামখেয়ালিতে হারিয়ে যাওয়ার আগে অন্য ক্রিকেটীয় জাতিকে ভয় দেখিয়েছেন তাঁরা, ঈর্ষার জন্ম দিয়েছেন। পাকিস্তানকে একমাত্র বিশ্বজয়ের স্বাদও এনে দিয়েছেন তিনি। ১৯৫২ সালের এই দিনেই জন্ম নিয়েছিলেন পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জেতা অধিনায়ক।

আপাতত ইমরানের কথা থাক। তিনি এখন খেলাধুলার বাইরের জগতের মানুষ। রাজনীতির ময়দানে জয় তুলে নিয়ে তিনি এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। মাশরাফির সঙ্গে তো আজ জন্মদিনের তারিখ মিলে গেছে দেশের আরেক অধিনায়কের—আমিনুল হক। দেশের ফুটবলের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক।

মাশরাফির মতো না হলেও আমিনুল স্বমহিমায় উজ্জ্বল। ফুটবলের সব শেষ আন্তর্জাতিক সাফল্যের অন্যতম নায়ক তিনি। কাকতালীয়ভাবে একটা তারিখে অধিনায়কত্বে বড় বড় নামগুলোর জন্মদিন পড়ে যাওয়া বিশেষ কিছুই তো।

দিনটা আসলেই অধিনায়কের!

সূত্র-প্রথম আলো

পাঠকের মন্তব্য Login Registration