ভোকাট্টা-৬০

প্রতিনিধি | সাহিত্য

রবিবার ৪ আগস্ট ২০১৯|১৬:০০:০৫ মি.


এনাম আহমেদ

দিনে ছবি দেখার সমস্যা বিবেচনা করে একদিন নাইট শো দিয়েই শুরু হলো-সুস্থ চলচ্চিত্র দেখার অভিযান। এই অভিযান চলছিল, যতদিন তপু সরকারি চাকরিতে যোগ না দেয় ততদিন পর্যন্ত। এর মধ্যেও একদিন বিব্রত হতে হয়েছিল। সে গল্প অন্য কোথাও করা যাবে। দিন গড়ায়, কলেজে ছুটি-ছাটাও কম। কেননা পড়ানোর পাশাপাশি নানা প্রশাসনিক কাজেও হাত লাগাতে হয় শিক্ষকদের। তাই শুভদা ঈদে পার্বণে কোনো ছুটি পেলেই প্রস্তাব দেয়—
— চলো তপু, ঢাকার আশপাশে কোথাও থেকে ঘুরে আসি ।
— চলো, যাওয়া যাক। কবে যেতে চাও।
— ঈদের পরদিনই চলো।
— কোথায় যাবে?
— নদীর ঐ পাড়ে।
— ঐ পাড় মানে জিঞ্জিরা?
— না কেরাণীগঞ্জেই, রামেরকান্দা না কোথায়?
— আন্দাজে কোথায় যাবে?
— না, সেলিম বলেছিলো ওদের বাড়িটা নাকি নদীর ধারে।
— ও, তাহলে চলো। ওখানেই যাওয়া যাক।
সেলিম, শুভদার প্রাক্তন ছাত্র। তার অনেকদিনের আমন্ত্রণ ছিলো প্রিয় শিক্ষককে গাঁয়ের বাড়িতে নিয়ে যাবার। এতদিন পর সেই আমন্ত্রণ রক্ষার সহযোগী তপু। ঈদের পরদিন যার যার বাসা থেকে বেরিয়ে বাংলামটর মোড়ে দু’জন একত্রিত হলো। প্রথমে সোয়ারিঘাট। তারপর নৌকায় বুড়িগঙ্গা পার হয়ে জিঞ্জিরা। দেশের বনেদি নকল নবীশের বাজার। তখনও বুড়িগঙ্গার উপরে কোনো সেতু হয়নি। হয়নি চকমিলানো রাস্তা-ঘাট। নদীর ওপারে দেখা গেলো অনেক মুড়িরটিন বাসের সারি। আর হুড খোলা বেবিটেক্সি। ঢাকা থেকে ততদিনে মুড়িরটিন উঠে গেছে। শুধু রামপুরা সদরঘাট রুটে তখনও মুড়িরটিন  বাস বহাল আছে।
অনেক জিজ্ঞাসার পর একটিতে চেপে বসা গেল। আস্তে আস্তে নদী পারের যাত্রী বোঝাই হবার পর হ্যান্ডেল মেরে বাস স্টার্ট নিলো এবং গদাই লস্করী চালে চলতে শুরু করলো। ঘিঞ্জি জনাকীর্ণ এলাকা। ছুটির দিন বলে জনমানুষের কোনো বিরাম নেই। উৎসবের আমেজে যাত্রীদের তেল চকচকে মুখ ও পোশাক ঝকমক করছে বাসে। চলতি পথে রাস্তা দু’ধারে আধাপাকা বাড়ি বা দোকানপাট। মাঝে মাঝে দু’ একটা ফাঁকা মাঠে চলছে ফুটবলের লড়াই। প্রায় মাইল দশেক চলার পর সবুজ মাঠের দেখা মিললো। শীতের আশপাশের সময় বলে মাঠে সবজি ও রবি ফসলের ছড়াছড়ি। রাস্তা সরু, বিপরীতমুখী গাড়ির জন্য রাস্তা ছাড়ার কারণে আমাদের গাড়ি খুব জোরে চলছে না। প্রায় ঘন্টা দুয়েক ভ্রমণের পর কাক্সিক্ষত স্টপেজে এসে শুভদা, তপুসহ নেমে পড়লো। ডানে-বামে তাকাতেই আচমকা একটি শব্দ তপুকে চমকিত করল।
— স্লালামালাইকুম স্যার।
— অলাইকুমসালাম। ও, সেলিম। আসছো তাহলে।
— জি¦ স্যার। প্রায় ঘণ্টাখানেক যাবত ওই চায়ের দোকানে বইসা আছি। ও আমার চাচা তো ভাই রবিন।
— তাই নাকি? কেমন আছো? আসলে তোমাদের এখানে বাস চলে ঠিকই কিন্তু রাস্তা তো পাশে বড় হয় নাই। তাই আস্তে আস্তে চলে, এ জন্যই দেরি হইলো।
— চলেন। মিনিট পাঁচেকের মতো হাঁটতে হবে। 
— কোনো অসুবিধা নাই। আমরা তো হাঁটতেই আসছি। মাঝেখানে তোমার বাড়িতে একটু বিশ্রাম।
বলেই শিক্ষক ছাত্রের যৌথ বিহার শুরু হলো। সরু গলিপথ। দু’পাশে পাকা, আধা-পাকা বাড়ির সমারোহ। এখনো গাঁয়ের গন্ধ ছাড়েনি। প্রতিটি বাড়ির সামনেই কিছুটা জায়গা, ছোট্ট বাগান, দু’চারটা গোলাপ, গাঁদা, বকুলের চারা, আছে পাতা বাহার। ভালই লাগছে তপুর। যেতে যেতে সেলিম বলছে—
— আসলে কী স্যার। এলাকার মানুষ কম বেশি ছোট-খাটো ব্যবসায়ী। সবাই জিঞ্জিরা বা চকে বা ইসলামপুরে ব্যবসা করে। এরা ডেইলি প্যাসেঞ্জার।
— প্রতিদিনই আসা-যাওয়া করে?
— হ্যাঁ, প্রতিদিনই।
— এই লক্কর-ঝক্কর বাসে। অনেক সময় নষ্ট হয় না?
— ওনারা বেবিটেক্সিতে নদী পাড়ে যায়। তারপর তো নৌকায় পারাপার। সকালে ভীড় কম। তাই সময় বেশি লাগে না। দূরত্ব তো মোটে পনেরো মাইলের মতো।    
 
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration