শিল্পকাঠি

প্রতিনিধি | সাহিত্য

বৃহস্পতিবার ২৩ মে ২০১৯|১৫:২৩:২২ মি.


কুতুব হিলালী

এদেশের শ্রমশীল-মেহনতি মানুষের সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। মাঠেঘাটে দিনমান পরিশ্রমে যাদের হাত কোমলতা হারিয়েছে, চোখেমুখে পোড়ারোদ তার রুক্ষতার ছাপ বসিয়েছে, বসনের শশব্যস্ত রূপ যাদের সর্বাঙ্গে লেপ্টে থাকে এবং আধোবুলি আধোহাসি নিয়ে যারা প্রতিটি ঋতুবৈচিত্র্যের খরা-জলোচ্ছ্বাস-দারিদ্র্য-মহামারী উজিয়ে জীবন অতিবাহিত করে, আমি তাদের মনোবেদনা বোঝার চেষ্টা করেছি। এবং আমি জেনেছি যে, একজন কর্মিষ্ঠ ও শ্রমঅন্তপ্রাণ মানুষের পবিত্র মুখশ্রী দিব্যদর্শনের শামিল।
তদুপরি শ্রমসুন্দরের যথার্থ প্রয়োগের ঊনতা আমি এখানে দেখেছি। সাধারণত সকালের অভিযাত্রা সন্ধ্যাকে অভিমণ্ডিত করে তোলে। যে ঘর ভালোবাসার, প্রীতি ও প্রসন্নতার, সে ঘর কখনও নিষ্কর্ম থাকতে পারে না। আমাদের সমাজসিদ্ধ প্রথাচার কর্মপ্রত্যয়ী; তবুও কেন জানি তা অপরিশীলিতের স্বরূপ নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সুবিশাল তেপান্তর বা মাঠঘাট-প্রান্তরকে যে হাত অনায়াস পারিপাট্যে সাজিয়ে তুলতে পারে (মহান কৃষিকাজ, ফসল উৎপাদন ও পরিচ্ছন্ন কর্মপ্রবাহ; এবংবিধ প্রবাসীদের কথা নাইবা বলা হলো), সেই হাত ঘরের আঙিনায় এসে বিষম চলৎশক্তিহীন, আড়ষ্ট ও জবুথবু হয়ে পড়ে থাকে। এবং অহেতু অবসাদে আপন আপন ঘরদোর ও গার্হস্থ্য পরিমণ্ডলকে রেখে দেয় বড় শ্রীহীন ও বিলোল ভঙ্গিমায়। শত শ্রমনিষ্ঠতা সত্ত্বেও আমাদের ব্যবহারিক পরিচ্ছন্নতাহীনতা তাই বড় দৃষ্টিকটু ঠেকে। এবং এই অপরিচ্ছন্নতাকে আমরা প্রায়শ একটি অসংশোধনীয় বিষয়রূপে উড়িয়ে দিই।
দৃষ্টির অভিশোভা, মার্জিত সৌষ্ঠব ও শিল্প-সৌন্দর্যবোধ মানুষকে পরিশীলিতরূপে গড়ে তোলে। প্রতিদিন যে পথ দিয়ে আমাদের গমনাগমন, সে পথের কিছু দাবি তো আমলে নেয়া চাই। রাস্তার দুপাশের শত আবর্জনা, অগলিত ধাতববস্তুরাশি, দৃশ্যমান নোংরা পয়ঃপ্রবাহ, আলুথালু খানাখন্দ, অভ্যস্ত নিষ্ঠীবন নিক্ষেপ আমাদের আচরিত জীবনের কদর্য-প্রকাশ। দিনের একটি সময় যদি আমরা নিজস্ব আঙিনা, সাধারণ জনপদ ও স্ব-স্ব কর্মপরিসরকে পরিষ্কার রাখতে উদ্যোগী হই, বাঙালি হিসেবে সেটি হবে আমাদের পরিচ্ছন্ন-সভ্যতা গড়ে তোলার লক্ষে একটি নিদারুণ কর্মসূচি। এবং পরিচ্ছন্নতার এই কর্মযজ্ঞকে আমি সবার উপরে স্থান দিই।
আমরা চাই হাত বাড়ালেই শান্তি, সবুজ ও সুদৃশ্য পরিমণ্ডল। পৃথিবীর উন্নত জাতিমানুষের উপমা নিজেদের অদম্য সক্রিয়তা, শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্ন-মানস বৈ আর কিছুই নয়-যেখানে সদিচ্ছা এবং সুরুচিবোধই একমাত্র শিল্পকাঠি।        

পাঠকের মন্তব্য Login Registration