জীবন খাতা-১২

প্রতিনিধি | সাহিত্য

মঙ্গলবার ৩১ জুলাই ২০১৮|১৭:৪২:৪০ মি.



এনাম আহমেদ
যাদুদের বাসার পাশ দিয়ে বয়ে চলা নতুন রাস্তাটি সেই মহাখালী পর্যন্ত লম্বা। এই পথের দু’ধারে ঘনঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি। ছোটরা একা ভয়ে কখনই ঐ জঙ্গলের কাছে যায় না। কারণ, কোথাও কোথাও হঠাৎ করে শিয়াল বেরিয়ে আসে।সন্ধ্যাবেলায় অবশ্য শিয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক শোনা যায়।যাদু মাঝে মাঝে ভয়ে পেয়ে রান্নাঘরে মায়ের পাশে গিয়ে বসে থাকে।কিন্তু দিনের বেলায় দলেবলে সেই ভয় তাদের কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তারা দল বেঁধে ঝোপের পাশে কাঠবিড়ালী ও ফড়িংয়ের পেছনে ছুটতে থাকে।  
বাসার পাশেই বিরাট মাঠ। মাঠের পাশ ঘেসেই চলে গেছে রাস্তাটি।বিকেল হলে যাদু মুকুলের সমাবেশে যোগ দেয়। কিন্তু তার সকালটিতে নিপাট অবসর। সকালের পড়া ও নাস্তা শেষ করার পর বাইরের হাতছানি তাকে অস্থির করে তোলে। সে শুধু সামনের বারান্দার রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।যদিও বাসা থেকে একা বেরুনো নিষেধ আছে। মা, তাকে ছেলে ধরা নিয়ে যাবে বলে ভয় দেখিয়ে রেখেছে। তাই যাদু একা বাইরে যায় না। বিল্ডিং এর সামনে মিন্টু, বাদল, মনাদের ছুটোছুটি দেখলে মন আর ঘরে থাকতে চায় না।ঘরের ভিতরটা একটু দেখেই যাদু বাইরে ভোঁ দৌড় দেয়। তারপর নিচে নেমেই মনার সাথে, 
-চল মনা আমরা আজ ফড়িং ধরবো।
-হ্যাঁ, চল। আমারও ফড়িং ধরতে ইচ্ছে করছে। 
-রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট ঝোপঝাড়ের দীর্ঘ সারি।লন্বা রাস্তা ধরে যতদূর চোখ যায় অসংখ্য ফড়িংয়ের ওড়াওড়ি। এরা নানান রঙ নিয়ে বালকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। যাদু আগে প্রাণ ভরে দেখে নিচ্ছে আকাশে ওড়া ফড়িংদের। এযেন ওদেরই রাজ্য। মনা বললো,
- কিরে ফড়িং ধরবি না?
যাদু শুধু চারদিক ঘুরে ঘুরে ফড়িংয়ের রং দেখছে। কত রঙের ফড়িং। এখন আর তার ফড়িং ধরতে ইচ্ছে করছে না। কেবল তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। আল্লাহ এদের কত রঙ দিয়েছেন। ইস্ আমার যদি এতো রঙ থাকতো, আর যদি দুটি পাখা থাকতো! তাহলে কী মজাই না হতো। উড়ে উড়ে কত জায়গায় যেতে পারতাম। এরই মধ্যে মনা একটা লাল রঙের ফড়িং ধরে ফেলেছে। মনার চিৎকার,
-ধরছি, একটা ধরছি। ফড়িংটা মনার হাতে দাপাদাপি করছে। আঙ্গুল থেকে ছুটে যেতে চাচ্ছে। দেখে যাদুর খুব মায়া হলো। যাদু বললো,
-এই মনা ফড়িংটা এবার ছেড়ে দে। ওর কষ্ট হচ্ছে। যাদুর কথায় মনাতো অবাক।
-বলিস কীরে? এত কষ্ট করে ফড়িংটা ধরলাম। এখন বলিস ছেড়ে দিতে। না ভাই আমি ছাড়বো না। যাদু ছুটে গিয়ে মনার হাত থেকে ফড়িংটা ছাড়িয়ে দিল।এরপর উড়ে যাওয়া ফড়িংটার দিকে অপলক তাকিয়ে রইল।

পাঠকের মন্তব্য Login Registration