জীবন খাতা-১১

প্রতিনিধি | সাহিত্য

রবিবার ২৯ জুলাই ২০১৮|১৮:৩৬:১৫ মি.



এনাম আহমেদ

যাদুর বর্ণমালা শেখার কাজ এগুচ্ছে খুব দ্রুত। এতে যাদু যেমন খুশি, যাদুর বাবাও তেমন খুশি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাপ-বেটা প্রাতঃভ্রমণে বের হয়। নতুন রাস্তার ধারে হাঁটতে হাঁটতে যাদু বাবার গল্পের জালে জড়িয়ে পড়ে। সে অনেক অগ্রহ নিয়ে বাবার গ্রামীন জীবনকে জানার চেষ্টা করে। বাবাও নগর জীবনের নাভিশ্বাস থেকে বেরিয়ে ছেলেকে তার শৈশবের সুখের গল্প শোনায়। এমনি করেই তাদের প্রায় প্রতিটি সকাল শুরু হয়। এরপর যাদুর বাবা নাস্তা অফিসে চলে যায়। তখন যাদুর অখন্ড অবসর। শুধু খেলা আর খেলা।

সন্ধ্যায় বাবা এসেই,

-যাদু যাও বই নিয়া আসো বাবা। যাদু দৌড়ে গিয়ে বইয়ের তাক থেকে তার পড়ার বইটি নিয়ে এলো। বাবা বললেন,

-আজ কিন্তু তোমাকে বর্ণমালার স্বরবর্ণের সবশেষ দু’টি বর্ণ শেখাবো।

-শেষ কেন আব্বা, আরও তো অনেক বর্ণ বাকি আছে।

-তা আছে। ওগুলো সব ব্যঞ্জনবর্ণ।

-ও তাই নাকি! আমিতো মনে করেছিলাম সবগুলো একই।

-না বাবা এক নয়।

-এক নয় কেন আব্বা ?

-তা নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো। এখন আসো পড়ি।

ও তে- ওল, ওল খেলে গলা ধরে।

ঔ তে-ঔষধি ফল, ঔষধি ফল পাকিলে মরে।

-ওল কী আব্বা?

-ওল একধরনে সবজি, যা জমিতে হয়।

-আর গলা কে ধরবে আব্বা?

-কেউ না। এখানে গলা ধরা মানে গলা চুলকানোর কথা বলা হয়েছে। কচু খেলে গলা ধরে। এই যেমন সেদিন তোমার মা কচু রান্না করলো, আর তুমি তা খেয়ে কান্না জুড়ে দিলে। তারপর তোমার মা তোমাকে তেঁতুল খেতে দিলো। এর অনেক পরে তোমার গলা চুলকানো কমলো।ঠিক আছে, এবার এর পরেরটা পড়ো।

যাদু পড়তে গিয়ে আবার থেমে যায়।একটু ভেবে বাবাকে প্রশ্ন করে।

-আচ্ছা আব্বা, ঔষধি ফলটা কী? ওটা কী আমি খেয়েছি?

-না তুমি এখনও খাওনি। তবে অসুখ হলে অনেকে ভেষজ ঔষধ খায়। সাধারণত কবিরাজরা এই ফলগুলো ঔষধ বানানোর জন্য ব্যবহার করে। যেমন-হরিতকি, বয়রা, আমলকী ইত্যাদি। এগুলি কিন্তু ঔষধি ফল। আবার তুমি যে তেঁতুল খেয়েছো, এরমধ্যেও ঔষধি গুণ আছে। দেখলে না তোমার গলা চুলকানো কমে গেলো।

-এবার বুঝতে পেরেছি আব্বা।

যাদুর বাবা যাদুকে নিয়ে ভাবছেন-আমার ছেলেটি অনেক প্রশ্ন করে। এত জিজ্ঞাসা ওর মনে, আসলে ও যে ভবিষ্যতে কী হবে আল্লাই জানেন। দুলে দুলে পড়া মুখস্থ করা যাদুর দিকে বাবা অপলক তাকিয়ে থাকে।আর যাদু পড়েই চলেছে  ঔষধি ফল পাকিলে মরে.......

পাঠকের মন্তব্য Login Registration