জীবন খাতা-১০

প্রতিনিধি | সাহিত্য

শুক্রবার ২৭ জুলাই ২০১৮|১০:৩৩:৫৮ মি.



এনাম আহমেদ
সকাল বেলা বাসার নিচ থেকেই শোনা যাচ্ছে, টমি, এই টমি এদিকে আয়। টমি ঐহানে যাইছ না। বাসা থেকেই যাদু বুঝতে পারে এটা মিন্টু ভাইয়ের গলা। মিন্টু এখনো পড়া শুরু করেনি।সকাল থেকেই সারা এলাকা চষে বেড়ানো তার কাজ। বাবা যাদুকে বলেছেন, ওসব দুষ্টু ছেলেদের সাথে কখনও মিশবে না। বাসায় বসে তোমার খেলনা নিয়ে খেলবে।
বাবা বাসা থেকে অফিসে বেরিয়ে যেতেই যাদু এক ছুটে বারান্দায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছে, ও বাসার মিন্টু ভাই একটা কালো রঙের কুকুর ছানাকে শিকলে বেঁধে সাথে নিয়ে ঘুরছে। আর কতক্ষণ পর পর একটু দৌড়ে দূরে গিয়ে হাতে রুটির টুকরা ধরে রেখে ডাকছে, টমি টমি। এই যে, এই হানে। বলতেই কুকুরটি তার কাছে দৌড়ে গিয়ে রুটির টুকরোটা লাফ দিয়ে মুখে নিয়ে নিচ্ছে। যাদু দেখলো এতো এক মজার খেলা। কিন্তু যাদু কুকুরের কাছে যেতে ভয় পায়। এছাড়া এখন বাসা থেকে বেরুলেই মা বকবেন।
একবার বাসার ভেতরটা উঁকি দিয়ে মায়ের অবস্থান দেখে নেয় যাদু। তারপর লম্বা ছুট। এক ছুটে দোতলা থেকে নিচে। তাকে দেখেই মিন্টু, 
-ঐ যাদু আইছস। খেলবি, আমার লগে খেলবি? দেখ আমার লগে টমি আছে। তুই চাইলে তোরে ভি একখান লাল কুত্তা দিমু।তুই লবি?
-না আমার মা বকা দেবে।
-খালাম্মা ভি দেখবো না। আমরা বিল্ডিং এর পিছে গিয়া খেলুম।যাবি আমাগো লগে?
কী এক অমোঘ টানে বকা আর বাবার পিটুনির কথা ভুলে গিয়ে যাদু মিন্টুর সাথে বেগুনবাড়ির দিকে রওনা দেয়। যদিও সে কুকুর ভয় পায়। তবু মিন্টু ভাই বলেছে, রুটি খাওয়ালে আর আদর করলে কুকুর কিচ্ছু বলে না। মিন্টু বলেছে সে কুকুরকে ট্রেনিং দিয়ে দেবে।
কিছুক্ষণের মধ্যে লাল রঙের এক কুকুর ছানা যোগার হলো।মিন্টু এটাকে ধরে যাদুর কাছে নিয়ে এলো।যাদুতো ভয়ে কুকুরের গায়ে হাত দিতে চায় না। সে ভয়ও পাচ্ছে আবার কুকুরের গায়ে ময়লা লেগে আছে দেখে কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে।মিন্টু ছানাটাকে একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে দিলো। আর ছানাটি কুঁই কুঁই করতে লাগলো। হয়তো কুকুরটির শৃঙ্খল ভালো লাগছে না, নতুন শেকল কিনা তাই।
একসময় মিন্টু বললো,
-ল যাই।কুকুরগুলারে বাসায় লইয়া যাই।ওরা রাইত জাইগা বাসা পাহারা দিবো।তাইলে চোরেরা আর চুরি করতে পারব না। তারা আগাতে চায়, কুকুরগুলো আর আগায় না। দুজনেই দড়ির মাথা ধরে ছানাগুলোকে হির হির করে টানছে। এক সময় মিন্টু নিজের ছানাটিকে কোলে করে বাসার দিকে রওনা দিল। আর যাদু কুকুরের গলার দড়ি ছেড়ে দিয়ে চললো একা। এই মুহুর্তে জীবের প্রেম তার বাসায় মার খাবার সম্ভাবনার কাছে পরাভূত হলো।

পাঠকের মন্তব্য Login Registration