পিছন পানে

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯|১৪:৪১:২১ মি.


সম্পাদক

কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। রোদ উঁকি দিতে এখনও অনেক দেরি। আড়মোড়া ভাঙ্গা প্রার্থনার শুরু গুনগুন স্বরে। কখনও ভর করে পুরনো গানের কলি আপন মনে। যা হয়তো শোনা হয়েছে বহুকাল আগে। আজকাল গান শোনা হয় না, হয়ে ওঠে না। আয়োজন কমে গেছে অনেক। কলের গান, লং প্লে, ক্যাসেট রেকর্ডার, সিডির নাদ, আসরের শ্রোতা—সবই ফুরিয়েছে যন্ত্র কৌশলের উন্নতিতে। শখ ভর করেছে এসে মুঠোফোন আর নেটের কল্যাণের ওপর। ব্যস্ততা বেড়েছে তো মানসে! মানুষেরা আজকাল যাতায়াতে জ্যামে বসে শোনে। নিজেই শোনে নিজের পছন্দকে ক্ষণিকের তরে। পার্শ্ববর্তীরা শোনে না কেউ। পরিবেশে আর ছড়ায় না মুর্ছনা আগের মতো।

কেজো ব্যস্ততা বেড়েছে অনেক। প্রশান্তির অবকাশ মানুষের কাছ থেকে নিয়েছে বিদায় অনেক আগেই। মানুষ ছুটছে গ্রামে কী শহরে। ছুটছে ঊর্ধ্বশ্বাসে, জীবনও জীবিকার তাগিদে। যদি এদের ফাঁকি দিয়ে কেউ চলে যেতে চায়, তাহলেই অসফল জীবন। এ বোঝার জীবন সে বইবে কেমনে। দুঃসহ ভার হয়ে উঠবে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে। মানুষ বড় সচেতন জীবন ধারণে। অচেতন শুধু জীবন-যাপনে। যাপিত জীবনে যেভাবেই সে সময়কে পার করুক না কেন। তা কতটা ভব্য—এসব ভাবনার তার ফুসরত কই?

তবুও অবসরক্ষণ মানুষকে পিছন টানে। ফিরে পেতে চায় সে দায়শূন্য অতীত, সে চায় শৈশব, কৈশোরের দিনগুলি। চায় যন্ত্রণাহীন শান্ত সৌম্য সকাল। যার পরতে পরতে দিন শুরুর প্রশান্তি। আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির সুর। রয়েছে প্রভাত সঙ্গীতের রাগিণী। তখনই ধরা পড়ে এ জগতের ব্যস্ততা খুবই মিছে; অসত্য অপলাপে ভরা। শুধু জীবনই সত্য—প্রকৃতির জীবন। যা ছড়ানো রয়েছে কুয়াশা ভেজা মাটির সোঁদাগন্ধের মাঝে। রয়েছে ঘাসের ডগায় চুঁইয়ে পড়া কুয়াশা ঝরার শব্দে। আর তখনি ঘুমভাঙা মানুষ শোনে ঘুমভাঙা পাখিদের প্রভাতের গান। যে গান মনে করাবে সোনালি অতীত, আগামীর জড়িমা মাখা বিকেলের কথা। ফ্যাকাশে জীবন ভরে উঠুক সুরের ঝর্ণাধারায়; কিছুটা রক্তিম হয়ে। তবেই তো জীবন বুঝবে জীবনের মানে। 
মন গেয়ে উঠবে— 
‘...নদী যদি হয় রে ভরাট কানায় কানায়। 
হয়ে যায় শুন্য হঠাৎ তাকে কী মানায়...’।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration