রবীন্দ্র চেতনায় নারী

প্রতিনিধি | সমালোচনা

শনিবার ১১ আগস্ট ২০১৮|১০:২৬:৪১ মি.



আতিউর রহমান: রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের মধ্যগগনে পরিপূর্ণ গৌরবে নক্ষত্রের মতো জ্বলছেন দেড় শত বর্ষের বেশি সময় ধরে। আশি বছরের দীর্ঘ জীবন ছিল তাঁর। জীবনের শুরুর দিকের বছর পনেরো বাদ দিলে অবশিষ্ট প্রায় ৬৫ বছর নিরলস কাজ করে গেছেন। বনেদি পরিবারে জন্ম নিয়ে তাঁদের প্রথা অনুযায়ী বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যর্থ চেষ্টা রবীন্দ্রনাথও করেছিলেন। এক বছর কয়েক মাস বিদেশ যাপন করে ফিরে আসেন তিনি। প্রথাগত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছেড়ে তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন। পুরো বিশ্বটাই যে তাঁর কাছে শিক্ষালয় হিসেবে ধরা দিয়েছিল। জীবন আর শিক্ষাকে তিনি কখনো আলাদা করে ভাবতে পারতেন না। তাই সারা বিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন মনের ক্ষুধা মেটানোর জন্য। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই বিশ্বভারতী গড়ার এক কঠিন ব্রত নিয়েছিলেন। আনন্দের সঙ্গে বিশ্বসংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সন্ধানের এক অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে তিনি তাঁর জীবনে বড় একটি অংশ নিবেদন করেছিলেন। পূর্ব বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থা পরিচালনার ফাঁকে ফাঁকে তিনি শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারেও ব্রতী হয়েছিলেন। তবে বরাবরই তাঁর প্রধান পেশা ও ভালোবাসা ছিল লেখালেখি। একসময় লেখাই তাঁর একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায়। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, এমনকি সেকালের ব্যক্তিগত যোগাযোগের একমাত্র শক্তিশালী মাধ্যম চিঠিপত্রগুলোও লিখে গেছেন সাহিত্যের মাত্রায়। রবীন্দ্রনাথ যত পাঠ করা যায়, ততই অবাক হতে হয়। একজন মানুষ তাঁর সাহিত্য ও কর্মজীবনে এমন বিচিত্র ব্যাপক কর্মের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন—সেটা ভাবনার জগতে বিস্ময়ের উদ্রেক করে। যেখানেই হাত দিয়েছেন সোনার ফসল ফলিয়ে বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডার ভরে রেখে গেছেন। রবীন্দ্রনাথের কল্যাণে বাংলা ভাষাভাষীদের সীমাবদ্ধ পরিসরটি প্রসারিত হয়ে ব্যাপক ও বিশাল বিশ্বের অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলা সাহিত্যও যে বিপুল বৈভব ধারণ করে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে আলোর ঝলকানি তুলতে পারে, সেই কথাটি রবীন্দ্রনাথ প্রমাণ করেছেন গীতাঞ্জলির মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার জিতে—সেই ১৯১৩ সালে।

সাহিত্যিক মানুষও বটে। কিন্তু সাহিত্যিক যখন একা থাকেন কিংবা কলম চালান, তখন তাঁর ভাবনার জগৎ কল্পনাশ্রিত, আবেগতাড়িত আর লেখার চরিত্র বা প্লট দ্বারা প্রভাবিত। দেশ-কাল-সমাজ সেখানে থাকে; কিন্তু চরিত্র নির্মাণের জন্য তার কিছু কিছু পরিবর্তন এসে যায় এবং কল্পনার দমকে বাস্তবতার কিছু পরিবর্তন হয়। সে জন্যই সাহিত্যিকের সাহিত্য জীবন আর ব্যক্তি জীবনের মধ্যে কখনো স্থূল আবার কখনো খুব সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য থেকে যায়। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে কথাটি খুব সাবধানে ভাবতে হয়। কারণ তিনি লেখনীর দ্বারা যা বলতে চেয়েছেন, তাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশ-কাল-সমাজের কালিকভাবনা সম্পৃক্ত হয়েছে। আরেকটু ভেতরে গিয়ে তথা পরিবারের মধ্যে গিয়ে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের ক্রিয়া-কর্ম বিশ্লেষণ করলে কিছু বৈপরীত্য দেখা দেয়, তাঁর সাহিত্যকর্মের সঙ্গে তুলনা করলে, বিশেষ করে তাঁর লেখায় নারীর অবয়ব বিনির্মাণ আর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে ব্যাবহারিক বা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কিছুটা বৈপরীত্য চোখে পড়ে। তবে সেগুলো ব্যাপক রবীন্দ্রনাথকে বিচারের তুল্যদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা সমীচীন নয়। কারণ গোটা সাহিত্যিক জীবনে তিনি প্রায় সবটুকুতে মানুষের জয়গান গেয়েছেন। মানসিকভাবে কিংবা বৈষয়িকভাবে অধঃপতিত মানুষের উন্নয়নের জন্য তাঁর ভাবনা যেমন লেখনীতে ছুটেছে, তেমনি বাস্তবিক ক্ষেত্রেও তাঁর প্রয়োগ আমরা লক্ষ করি। পূর্ব বাংলায় জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে আসার পর এখানকার জমিদারিতে হতদরিদ্র কৃষকের জন্য তাঁর দরদ এবং তাদের উন্নয়নের জন্য নিজের সর্বস্ব দিয়ে ক্ষুদ্রঋণের জন্য সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন। হিন্দু-মুসলমান-নির্বিশেষে সব প্রজার প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ ভালোবাসার কারণেই কোনো প্রজাকে পরজন্মে তাঁরই প্রজা হয়ে জন্মানোর আকাঙ্ক্ষা করতে দেখা যায়। এহেন দরদি মানুষ যে তাঁর জীবন চালানোর পথে সব ক্ষেত্রেই সুবিচার করতে করতেই এগিয়ে গিয়েছিলেন, তা বিশ্বাস করতে মনে খুব বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কথা নয়। তবে রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি নন, শুধু প্রজাবৎসল জমিদার নন, তিনি স্বামী, পিতা এবং পারিবারিক সব সম্পর্কের মধ্যেই বিজড়িত একজন মানুষ। কাজেই তাঁর কিছু ভুল হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলে তাঁর প্রতি সমালোচনা ঠিক নিরপেক্ষ হয় না। তাঁর সব লেখা যেমন সাহিত্যের মানদণ্ডে সর্বোচ্চ হওয়ার দাবি করা যায় না, তেমনি ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের সব কাজই জীবনের তুল্যদণ্ডে উতরে গেছে—সে রকম ঢালাওভাবে দাবি করাটাও সংগত হবে না।

রবীন্দ্রনাথ বিয়ে করেছিলেন অল্প বয়সে এবং সেটা বাল্যবিবাহ।

তখনকার প্রেক্ষাপট আর পারিবারিক নিয়ম-শাসনের দিক থেকে বিবেচনা করলে তাঁর বাল্যবিবাহটি আমলে না নিলেও চলে। কারণ রবীন্দ্রনাথ তাঁর পিতার কনিষ্ঠ সন্তান। তাঁর বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিপুল ব্যক্তিত্বের মানুষ; তাঁর বড় ভাইয়েরা ও বোনেরা নিজ নিজ স্থানে উজ্জ্বল আর ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্যগত দিক তো আছেই—সব মিলিয়ে তাঁর বাল্যবিবাহটি নিয়ে খুব বিরূপ সমালোচনা করা উচিত হবে না। তাঁর বাল্যবিবাহটা আমরা পরিপ্রেক্ষিতের বিবেচনায় মেনে নিলেও তাঁর তিন কন্যার বাল্যবিবাহ আমাদের মনে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরিতে সহায়ক রসায়ন হিসেবে কাজ করে। ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের বিদ্যার বহর তো খাটো নয়, তারা অনেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত উজ্জ্বল। তাঁর বড় বোনেরা যথেষ্ট শিক্ষিত হয়েছিলেন, সাহিত্যিক হিসেবেও নাম করেছিলেন। স্বর্ণকুমারীকে তো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ সম্মান ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ দেওয়া হয় এবং এই পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনিই প্রথম নারী। মেয়েদের মধ্যে ইন্দিরা, সরলা, প্রতিভাসহ অনেকেই উজ্জ্বল ছিলেন তাঁদের শিক্ষাজীবনে। রবীন্দ্রনাথ ভাতিজিদের সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনও ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন নিজের তিন মেয়েরই বিয়ে দেন বাল্যকালে (মাধুরী চৌদ্দ, রেণুকা এগারো আর অতসীর চৌদ্দ বছরে বিয়ে হয়), তখন অনেক পাঠকের মনেই বেশ খানিকটা খটকা লাগে বৈকি। কিন্তু অনেকে এর কারণ হিসেবে ওই সময়ে রবীন্দ্রনাথের অর্থাভাবকে উপস্থাপন করেছেন। আবার অনেকে সেটা নাকচও করেছেন। ব্যক্তিজীবনে রবীন্দ্রনাথের এই বিপরীত ভাবনা নারীবিষয়ক তাঁর অনেক অসাধারণ কালিকভাবনাকে হয়তো কিছুটা ম্লান করে দেয়। তবে খুব তন্ন তন্ন করে খুঁজলে রবীন্দ্রনাথের চেতনায় নারীর মহিমান্বিত অবস্থানকে ম্লান করার জন্য এমন দু-একটি ঘটনা তাঁর সামগ্রিক অবস্থানের কাছে অত্যন্ত ক্ষুদ্র বলেই মনে হবে। কিন্তু তাঁর মেয়েদের এই বাল্যবিবাহের ক্ষেত্র এবং সেই ক্ষেত্রের মানসিক সমর্থনে রচিত নববর্ষ, ব্রাহ্মণ, মা ভৈঃ প্রবন্ধগুলো যেন তাঁর প্রতি অস্বস্তির এই ক্ষেত্রটাকে বড় করে তোলে। কারণ এর আগেই তিনি বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লেখেন ‘হিন্দুবিবাহ’ প্রবন্ধ এবং মেয়েদের বিয়ের আগেই ভারতবর্ষীয় বাহ্মসমাজের চেষ্টায় বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয়। সুনির্দিষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও এবং একজন সচেতন মানুষ হয়েও তিনি কেন মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিলেন, সেটি নিয়ে বিরূপ সমালোচনা ফেনিয়ে তোলা যায়; কিন্তু প্রকৃত কারণটা আমাদের অধরাই থেকে যাবে। এই বিষয়ে হয়তো রবীন্দ্রপাঠকের অস্বস্তি থেকেই যাবে।

এই রকম টুকরা টুকরা বিচ্ছিন্ন কিছু বৈপরীত্যের খসড়া করে রবীন্দ্রনাথকে বিচার করতে যাওয়া ঠিক হবে না। ব্যক্তিগত জীবনে মানুষের নানা রকম বাধা ও বাঁধন থাকে, যা চাইলেও মানুষ অতিক্রম করতে পারে না। রবীন্দ্রনাথের এসব টুকরো টুকরো ভুল সেই আলোকে ধরে নিলে তাঁর সম্পর্কে সুবিচার করা হয় এবং রবীন্দ্রানুরাগীদেরও মানসিক স্বস্তি আসে।

তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে রবীন্দ্রনাথের চেতনায় নারী—বিষয়টি ব্যাপক এবং সুগভীর। সেখানে মনের গহীনে থাকা চৈতন্যমগ্ন ভাব আছে, সচেতন বিবেকের দায় আছে। সেখানে কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে চলমান ভাবনায় সৃষ্টি করার আকাঙ্ক্ষা আছে। সেই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের ক্ষেত্রে আবার সতর্ক থাকার তাগিদও আছে। মানবমনের এই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলোর বেশির ভাগই বিশ্লেষণের অতীত থেকে যায়; রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে এই কথাটি আরো বেশি করে প্রযোজ্য। কারণ তিনি তাঁর চেতনার জায়গায় বহুবার বাঁক বদল করে করে চলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘বাল্যকাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশের নানা অবস্থা এবং আমার নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দীর্ঘকাল আমি চিন্তা করেছি এবং কাজও করেছি।...যে মানুষ সুদীর্ঘকাল থেকে চিন্তা করতে করতে লিখেছে তাঁর রচনার ধারাকে ঐতিহাসিকভাবে দেখাই সংগত।...কোনো বাঁধা মত একেবারে সুসম্পূর্ণভাবে কোনো এক বিশেষ সময়ে আমার মন থেকে উৎপত্তি হয়নি—জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে নানা পরিবর্তনের মধ্যে তারা গড়ে উঠেছে।’ (‘রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তা’ কালান্তর, বিশ্বভারতী গ্রন্থালয় বিভাগ, পৃ. ৩৪১-৩৪২)

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বরাবরই বদলে নিয়েছেন। বিশ শতকের ‘সবুজপত্রে’র যুগে তিনি নতুন যুগের আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন। সেই যুগে তাঁর চোখে নারীর অবস্থান অনেক সংহত ও সপ্রতীভ। ‘আমার মনে হয় পৃথিবীতে নতুন যুগ এসেছে। ...ঘরের মেয়েরা প্রতিদিন বিশ্বের মেয়ে হয়ে দেখা দিচ্ছে।...কল্পান্তের ভূমিকায় নূতন সভ্যতা গড়বার কাজে মেয়েরা এসে দাঁড়িয়েছে—প্রস্তুত হচ্ছে তারা পৃথিবীর সর্বত্রই। তাদের মুখের ওপর থেকেই যে কেবল ঘোমটা খসল তা নয়—যে ঘোমটার আবরণে তারা অধিকাংশ জগতের আড়ালে পড়ে গিয়েছিল সেই মনের ঘোমটাও তাদের খসছে।’ (কালান্তর, দ্বাদশ খণ্ড, পৃ. ৬২৪)

সমকালীন সমাজ ও লোকাচারে পিষ্ট বাঙালি নারীর রূঢ় বাস্তবতার কথা রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘মুক্তি’ কবিতায় এক গৃহবধূর দুর্বিষহ জীবনের হাহাকারের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন—

‘জানি নাই তো আমি যে কী, জানি নাই এ বৃহৎ বসুন্ধরা

কী অর্থে যে ভরা।

শুনি নাই তো মানুষের কী বাণী

মহাকালের বীণায় বাজে। আমি কেবল জানি,

রাঁধার পরে খাওয়া, আবার খাওয়ার পরে রাঁধা,

বাইশ বছর এক চাকাতেই বাঁধা।

(রবীন্দ্রনাথ, ‘পলাতকা’)

যদিও রবীন্দ্রসময়ের নারীর সেই বাস্তবতা অনেকাংশেই আজ বদলে গিয়েছে, তবু তাদের একটি বড় অংশকে গৃহস্থালির ওই চাকা বেঁধে রাখার পক্ষের পুরুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারী তার আপন শক্তি ও কিছু সাংগঠনিক সহযোগিতায় প্রতিনিয়তই এগিয়ে চলেছেন। অনেক সচেতন পুরুষও নারীর সচেতনায়নে ও ক্ষমতায়নে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আজকের নারীর এই এগিয়ে যাওয়ার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ভিত্তিভূমি তৈরিতে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা খাটো করে দেখার উপায় নেই।

আত্মচৈতন্যের বিপুল এক শক্তির অধিকারী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জীবনের পথে পথে আমরা সেই শক্তির বলেই গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদর্শিতার মিলিত যৌগিক রসায়নে সৃষ্ট সার্বভৌম মানসিকতার এক রবীন্দ্রনাথকে দেখতে পাই। সার্বভৌম সেই রবীন্দ্রনাথের অন্তরে সঞ্চিত সদিচ্ছার প্রাবল্যেই তিনি ঘরে-বাইরে সর্বদা একটা ইতিবাচক অন্তর্গত ভাব বজায় রাখতে পেরেছিলেন। তা না হলে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিশাল রচনাভাণ্ডারে নারীচরিত্রগুলো রূপায়ণে এতটা ইতিবাচক হতে পারতেন না। অন্তর্গতভাবে নারীর প্রতি সম্মানবোধ না থাকলে শুধু কল্পনার ওপর নির্ভর করে এতগুলো নারীচরিত্র তিনি বাস্তবতার নিরিখে বিচার করে কালিকভাবনায় উত্তরণ ঘটানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হতো না। সুতরাং রবীন্দ্র চেতনায় নারী উজ্জ্বল ও মহিমান্বিত রূপেই ধরা দেয় ব্যক্তিজীবনে ও তাঁর বিশাল সাহিত্যকর্মে। সৌভিক রেজার ‘রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে এক মুখচ্ছবি’ প্রবন্ধে উদ্ধৃত হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথা দিয়ে এই লেখার ইতি টানা যাক—“সর্বভূমিতে তাঁর বিচরণ, সর্বক্ষেত্রে তাঁর ব্যাপ্তি, সর্বদেশে তাঁর অধিষ্ঠান, সর্বমানবীয় আস্বাদে ও আকুলতায় তাঁর শিল্পীসত্তার পুষ্টি, সর্বজনের অন্তরে তাঁর অধিকার।’’

পাঠকের মন্তব্য Login Registration